চট্টগ্রামে একের পর ঘটছে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। এই আগুনে পুড়ে নিংস্ব হয়ে যাচ্ছে সাধারণ পরিবার থেকে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানও। বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ, নিম্নমানের বৈদ্যুতিক ক্যাবল ও অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যবহারের পাশাপশি বিড়ি সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরো থেকে এসব আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। চট্টগ্রামে চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৫৯৯টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে ঘটেছে ৩১৬টি, যা মোট অগ্নিকাণ্ডের প্রায় ৫২ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন বাড়ানো ও আগুন নেভাতে সক্ষম আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা জরুরি।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রাম বিভাগীয় দপ্তরের উপপরিচালক জসিম উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রামে বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ, মানসম্মত বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার না করা, ভোল্টেজ ওঠানামা করা এসব কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেশি ঘটছে। এরপর গ্যাসের লাইনের লিকেজ ও বিড়ি সিগারেট জ্বলন্ত টুকরা থেকেও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় ৫৯৯ টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে ৩১৬টি, যা মোট অগ্নিকান্ডের ৫২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এছাড়াও বিড়ি সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরো থেকে আগুন লেগেছে ১৪৯টি, চুলা (ইলেকট্রিক, গ্যাসের , মাটির ইত্যাদি) থেকে ৫৬ টি, গ্যাসের চুলা থেকে ৫১ টি, ছোটদের আগুন নিয়ে খেলা থেকে ৫টি, কয়েল থেকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে ৪টি, খোলা বাতির ব্যবহারে তিনটি, উচ্ছৃখল জনতার অগ্নিসংযোগে ৫টি, যন্ত্রাংশের ঘর্ষণজনিত কারণে দুটি, রাসায়নিক ক্রিয়ায় দুটো, আতশবাজি থেকে একটি ও কারণ উদঘাটন হয়নি এমন অগ্নিকাণ্ড আছে ৫টি।
ফায়ার সার্ভিসে তথ্য মতে, চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় মিলে ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা রয়েছে ৩৭টি। যা চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা শিল্প কারখানা ও বাসা বাড়ির জন্য অপ্রতুল। সেই সঙ্গে রয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতির সমস্যাসহ জলাধার সংকট, ফায়ার হাইড্রেন্ট সুবিধাও পর্যাপ্ত না, রাস্তায় যানজটসহ অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে আগুন লাগলে আগুন নেভাতে হিমশিম খেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রাম সূত্র জানায়, গত ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) একটি কারখানায় আগুন লাগে। আগুন লাগার ২৪ ঘণ্টা পর আট তলা বিশিষ্ট ওই কারখানায় আগুন নির্বাপনে আনা সম্ভব হয়। এছাড়া গত ১৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের-সাতকানিয়া ও চন্দনাইশের সীমান্তবর্তী চরতীতে কারখানার গুদামে আগুনে দগ্ধ হয়ে ৬ জন মারা যান। গত ২৬ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরীর মোহরার মৌলভীবাজারের একটি বসতবাড়ীতে বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে আগুন লাগে। এতে গীতা রানী ঘোষ ও তার নাতনী স্কুলছাত্রী শশী ঘোষ মারা যায়।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল