৭ জুলাই, ২০২০ ১৪:৫৭

ডিএনডিতে কমছে পানি, জলাবদ্ধতা নিচু এলাকায়

সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

ডিএনডিতে কমছে পানি, জলাবদ্ধতা নিচু এলাকায়

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) প্রজেক্টের অভ্যন্তরের জলাবদ্ধতা ধীরে ধীরে কমছে। তবে এখনও অনেক নিচু এলাকায় পানি রয়েছে। পুরো পানি নিষ্কাশন করতে এবং ডিএনডিকে পরিকল্পিত বাসোপযোগী করতে সেনাবাহিনীর নেয়া প্লান বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য দ্রুত ছাড় করতে হবে চাহিদামাফিক অর্থ। বিলম্বে অর্থ ছাড়ে পূর্বের পরিষ্কার করা খালসহ অন্যান্য কাজ পুনরায় করতে হলে প্রকল্পের বাজেট আরো বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। 

তবে প্রকল্পের এক কর্মকর্তা জানালেন, মৌখিকভাবে আমরা শুনেছি আমাদের চাহিদামত অর্থ ছাড় দেয়া হবে। তবে এখনও আমরা কাগজে-কলমে ওই অর্থ ছাড়ের কোনো নির্দেশনা পাইনি। 

তবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান বাসযোগ্য ডিএনডি গড়তে সেনাবাহিনীর দ্বারা পরিচালিত ডিএনডির কাজের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে বৈঠক করেছেন।

১৯৬২-৬৮ সালে ৮ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমি নিয়ে তৈরি করা হয় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) প্রজেক্ট। যার মধ্যে নারায়গঞ্জ-৪, ঢাকা-৪ ও ঢাকা-৫ আসনের ঢাকার ডেমরা, যাত্রাবাড়ি, কদমতলী, শ্যামপুর, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অধিকাংশ (নাসিক ১নং ওয়ার্ড, ২নং ওয়ার্ড, ৩নং ওয়ার্ড, ৭নং ওয়ার্ড, ৮নং ওয়ার্ড ও ৯নং ওয়ার্ড এলাকা) ও ফতুল্লা থানার অংশ বিশেষ এলাকা রয়েছে। 

১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় ডিএনডি প্রজেক্ট ছিল বন্যামুক্ত। এরপর থেকে ডিএনডি প্রজেক্টে লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তারা অপরিকল্পিতভাবে ডিএনডিতে বাড়ি-ঘর, স্কুল-কলেজ, শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করতে থাকে। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে থাকে ডিএনডিতে। ইতোপূর্বে একাধিকবার ডিএনডিতে কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হয়েছিল। 

বিএনপির শাসনামলে ঢাকা-৪ ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য যথাক্রমে সালাহউদ্দিন আহমেদ ও গিয়াস উদ্দিন আহমেদ ডিএনডি খালগুলো সংস্কার ও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করেছিলেন। এরপরও ডিএনডিবাসী রক্ষা পায়নি জলাবদ্ধতা থেকে। 

ফলশ্রুতিতে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান জলাবেদ্ধতা থেকে ডিএনডিবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে তৎকালানী পরিকল্পনামন্ত্রী (বর্তমানে অর্থমন্ত্রী) আ হ ম মোস্তফা কামালকে নিয়ে ডিএনডি পরিদর্শন করে। পরবর্তীতে শামীম ওসমান সরকারের উচ্চ মহলে একাধিক বৈঠক করে। সেই প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট একনেকের সভায় ৫৫৮ কোটি টাকার ডিএনডির এক মেগা প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর প্রজেক্ট সম্পন্ন করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সেনাবাহিনী চুক্তিবদ্ধ হয়। ২০১৭ সালের ৮ ডিসেম্বর তৎকালীন পানি সম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সিদ্ধিরগঞ্জে পানি নিষ্কাশনের খাল পুনঃখনন করে প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্পের এক কর্মকর্তা জানালেন, প্রথমে তড়িঘড়ি করে প্রকল্পটি নেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে দেখা যায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে এ ব্যায় অনেক বেড়ে গেছে।  প্রকল্পের ভেতরের অবৈধ স্থাপনা, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, বিদ্যুত ও পানির লাইন দূরীকরণে এ প্রকল্পের ব্যয় বাড়ে। ফলে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে আরও ১৩’শ কোটি টাকা লাগবে। এ অর্থ বরাদ্দ না হলে ডিএনডিবাসীকে জলাবদ্ধ হয়েই বসাবাস করতে হবে। 

তবে এ কর্মকর্তা জানান, আমরা মৌখিকভাবে শুনেছি সাংসদ শামীম ওসমান স্যারের প্রচেষ্টায় নতুন বরাদ্দ দেয়া হবে। তবে আমরা এখনও কাগজে-কলমে কোনো বরাদ্দ পাইনি। অচিরেই কাঙ্খিত বরাদ্দ পেলে ডিএনডিকে বাসযোগ্য করার কাজ শুরু করবো। 

এপ্রিল মাস থেকে ডিএনডিতে জলাবদ্ধতা শুরু হওয়ার পর তা ভয়াবহ রুপ নেয় মধ্য জুনে। এতে করে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান দ্রুত পানি নিষ্কাশনে পদক্ষেপ নিতে ডিএনডির সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করেন। যার ফলশ্রুতিতে সেনাবিহিনী ৪৮ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে ১৯ জুন নতুন দুটি পাম্প বসিয়ে পানি সেচ করতে থাকে বলে জানিয়েছেন ডিএনডি উন্নয়নের প্রকল্প পরিচালক ১৯ ইসিবি’র লে. কর্নেল মোহাম্মদ মাসফিকুল আলম ভূঞা (পিএসসি)। 

ফলে ডিএনডিবাসী ভয়াবহ জলাবদ্ধতাথেকে রক্ষা পায়। তবে এখনও নিচু এলাকাগুলোতে পানি রয়েছে। যা দূর করতে হলে অচিরেই নতুন বরাদ্দ দিয়ে ডিএনডির মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর