দেশের অন্যতম জনপ্রিয় রাইড–শেয়ারিং ও ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম পাঠাও। যাতায়াত ব্যবস্থায় অন্যতম বিপ্লব ঘটিয়েছে তারা। বিশেষ করে বেকার যুবকদের আয়-রোজগারের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় তাদের সেই সেবা ধরে রাখতে পারছে না বলে মনে করেন পাঠাও আরোহীরা। এমনকি প্রশ্ন উঠেছে তাদের ভাড়া ও অনিয়ন্ত্রিত চলাচল নিয়েও।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যবহারকারীদের এ অসন্তোষ যেন আরো বেড়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া দাবি, রাইড বাতিল, নিরাপত্তাহীনতা এবং অভিযোগের পরও প্রতিকার না পাওয়ায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। এছাড়া ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য অপব্যবহার এবং চালক ও যাত্রীদের মধ্যে নিরাপত্তা বিষয়ক উদ্বেগ রয়েছে। অধিকাংশ রাইডার যাত্রীর হাতে তুলে দেন নিম্নমানের হেলমেট। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে রাস্তায় উল্টাপাল্টা বাইক চালানোরও অভিযোগ করেছেন অনেক যাত্রী।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাতের বেলা পাঠাও রাইড পাওয়া এখন অনেকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অভিজ্ঞতা হয়ে উঠছে। কেউ কেউ দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও রাইড পান না, আবার কেউ রাইড কনফার্ম হলেও বাতিলের মুখে পড়ছেন। এছাড়া রাত হলেই ভাড়া বাড়িয়ে চান রাইডাররা। কল দিয়ে এক থেকে দেড়গুণ ভাড়া দাবি করেন, রাজি না হলে ক্যানসেল করেন রাইড।
মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশান এলাকায় রনি নামের একজন যাত্রী বলেন, ২০ মিনিট অপেক্ষা করলাম, কোনো রাইডার রিসিভ করে না। দুইজন রিসিভ করলেও পরে ক্যানসেল করে দেয়। পুলিশ প্লাজা থেকে মিরপুর ১২ পর্যন্ত অ্যাপে ভাড়া দেখায় ১৭০ টাকা, কিন্তু রাইডার কল দিয়ে বলেন ২৫০ লাগবে।
এছাড়া রনির দাবি, অনেক রাইডারই নিম্নমানের হেলমেট দেন। তিনি বলেন, কখনো কন্সট্রাকশনের হেলমেট দেয়। আমি বুঝি না, হেলমেট কি আমাকে বাঁচায় নাকি আমি হেলমেটকে বাঁচাই।
হাতিরঝিল এলাকার আরেক যাত্রী কাউসার বলেন, রাত ৮টার পরে পাঠাও পাওয়া কষ্ট হয়ে গেছে। যারা রাইড নেয়, তারা এসে বেশি ভাড়া চায় বা ক্যান্সেল করে দেয়। আমি যে এতক্ষণ ওয়েট করি, তার তো কোনো ক্ষতিপূরণ পাই না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাঠাও ব্যবহারকারীদের ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে প্রতিনিয়ত। Pathao Users Bangladesh ও Tech & Ride Share Review BD–এর মতো গ্রুপগুলোতে অনেকেই অভিযোগ করেছেন, রাইডাররা অ্যাপের বাইরে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করছেন অথবা ট্রিপ গ্রহণের পরই বাতিল করে দেন।
গত ১০ নভেম্বর ফেসবুক গ্রুপ Pathao Users Bangladesh-এ একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, রাইড কনফার্ম করার পর রাইডার ফোন দিয়ে বলে—দূরত্ব বেশি, অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে। না দিলে ট্রিপ ক্যানসেল করবে।
রাইডারদের অভিযোগ, কোম্পানির কমিশন ও ইনসেনটিভ নীতির কারণে তাদের আয় কমে গেছে। আগে নির্দিষ্ট সংখ্যক ট্রিপে বোনাস পাওয়া যেত, এখন তা কঠিন শর্তের কারণে প্রায় অপ্রাপ্তিযোগ্য।
বেইলে রোডে আনিসুল হক নামে একজন রাইডার বলেন, আগে দিনে ১০টা ট্রিপ করলে বোনাস পেতাম। এখন শর্ত এমন যে, বোনাস দেখা দায়।
এদিকে, পাঠাওয়ের বিরুদ্ধে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য অপব্যবহারেরও অভিযোগ রয়েছে। অনেক সময় চালকের দেওয়া তথ্য বা অ্যাপের তথ্যে গরমিল দেখা যায়।
এছাড়া চালকদের দক্ষতা এবং নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণের অভাবকেও অনেক যাত্রী ভোগান্তির একটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অনেক চালকের নিজস্ব বাহন বা তার নিরাপত্তা-বিষয়ক তথ্যে সঠিকতা থাকে না, যা যাত্রীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়।
গ্রাহকদের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় অভিযোগের দ্রুত সমাধান হয় না বলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন বলেন, আগে পাঠাও রাইড শেয়ার ব্যবহার করতাম। অধিকাংশ রাইডার অদক্ষ। এলোমেলোভাবে রাস্তায় বাইক চালায়। খুব ভয় লাগে। ভাড়া বেশি দাবি করে। এসব নিয়ে কাস্টমার কেয়ারে বেশ কয়েকবার অভিযোগ দিলেও তেমন কাজ হয়নি। এখন বাধ্য হয়ে অন্য রাইড শেয়ার ব্যবহার করি।
যাত্রীদের প্রত্যাশা
বর্তমানে ‘পাঠাও’ সংশ্লিষ্ট না হয়েও অনেকে স্বেচ্ছায় এসব বাইক সার্ভিস দিয়ে থাকেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এসব নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। যাত্রীরা মনে করেন এরা হয়তো পাঠাওয়ের তালিকাভুক্ত চালক। তাদের দ্বারা কোনো রকম বিড়ম্বনা বা হয়রানির শিকার হলে আঙুল উঠে পাঠাওয়ের দিকে। অনেকে এটাও বলছেন, এ বিষয়গুলোও পাঠাওকে দেখতে হবে। প্রয়োজনে এসব স্বেচ্ছায় বাইক চালকদেরও তাদের তালিকাভুক্ত করতে হবে। এতে করে হয়রানি কমবে, পাঠাওয়ের সুনাম বাড়বে।
খাবার ডেলিভারিতেও ভোগান্তি
যাত্রী সেবার মতো আরো একটি সেবা রয়েছে পাঠাওয়ের। যা ফুড ডেলিভারি দিয়ে থাকে। বর্তমানে তাদের এ সার্ভিস নিয়েও অসন্তোষ দেখা গেছে। গ্রাহকদের অভিযোগ, খাবার পৌঁছাতে বিলম্ব, ভুল অর্ডার ও ঠান্ডা খাবার পাওয়া এখন নিয়মিত ঘটনা।
গত ৮ নভেম্বর নাদিয়া রহমান নামে একজন গ্রাহক টুইটারে লেখেন, Pathao Food service is getting worse every day. 2 hours late, cold food, and no refund response!
উত্তরার একটি বেসকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারহানা আক্তার বলেন, বাসা থেকে আমি সাধারণত খাবার আনি না। ক্লাসের বিরতির ফাঁকে পাঠাও ফুডে ওর্ডার দিয়ে থাকি। কিন্তু বর্তমানে সার্ভিস ভালো না। দেরিতে খাবার আসে, রিসিভ করি ঠান্ডা অবস্থায়।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল