৬ জুন, ২০১৬ ১৭:২০

সিটিংয়ের নামে গণপরিবহনে প্রতারণা

কেবল এক ফ্লাইওভার পার হতেই গুণতে হয় ২৫ টাকা

মাহবুবুল আলম

সিটিংয়ের নামে গণপরিবহনে প্রতারণা

রাজধানী ঢাকার বেশিরভাগ গণপরিবহনে 'কম স্টপেজ' কিংবা 'সিটিং সার্ভিস' লিখে সিটের বাইরে দাঁড় করানো যাত্রী নিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চললেও বিষয়টি যেন দেখার কেউ নেই। আর এক্ষেত্রে নিরুপায় যাত্রীরা বাধ্য হয়ে কষ্টের টাকা তুলে দিচ্ছেন হেলপারের হাতে। অবশ্য যাত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ প্রতিবাদী হয়ে ওঠলে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে গাড়ির হেলপার এবং কন্ডাক্টাররা। অনেক সময় মাঝপথে প্রতিবাদকারীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়া হয় রাস্তায়। রাজধানীতে ভয়াবহ আকার ধারণ করা পরিবহণ মালিকদের এই ব্যবসাকে সিটিংয়ের নামে চিটিং ব্যবসা বলে অভিহিত করে থাকেন যাত্রীরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর এইসব চিটিং সার্ভিসগুলোর বেশিরভাগ যাত্রাস্থল মিরপুর। গাবতলী, আনসার ক্যাম্প, মিরপুর-১, ২, ১০ ও ১২ নম্বর হয়ে যেসব বাস কুড়িল, নতুনবাজার, উত্তরা যাচ্ছে সেগুলোর সর্বনিম্ন ভাড়া ২৫ থেকে ৩০ টাকা। মিরপুর থেকে পল্টন, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, আজীমপুর কিংবা সদরঘাটের বাসগুলোতেও ওই একই অবস্থা। এসব বাসেও নেওয়া হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। কিন্তু বাসগুলোতে সিটিংয়ের বালাই নেই। গাড়ির নির্দেশনা অনুযায়ী, এক সিট কেবল একজনের কাছে বিক্রি করার কথা বলা হলেও পুনরায় বিক্রি হচ্ছে আরও অন্তত ৩ জনের কাছে। আবার লোকাল সার্ভিসের মতো যেখানে যাত্রী সিগন্যাল দিচ্ছে, সেখানে থামিয়ে দিচ্ছে গাড়ির চালক। ফলে কষ্টের অর্থ থেকে বাড়তি টাকা দিয়ে যেমন যাত্রীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না, তেমনি এখানে সেখানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে যানজাটের নগরীতে আরও যানজট বাড়িয়ে দিচ্ছেন বাস শ্রমিকরা।

শরীফ খান নামে এক বেসরকারি চাকুরিজীবী অভিযোগ করেন, ''কর্মস্থলে যাওয়ার তাগিদে মিরপুর কালশি থেকে সপ্তাহে ৬ দিন কুড়িল বিশ্বরোড় যেতে হয়। কিন্তু এই কয়েক কিলোমিটারের যাওয়ার জন্য যাওয়া-আসা মিলে তাকে বাস ভাড়া গুণতে হয় ৫০ টাকা। আবার গাড়ি সিটিংয়ে চলার কথা থাকলেও চলে না। চালক ইচ্ছা মতো যাত্রী তোলেন।'' তিনি আরও বলেন, আনসার ক্যাম্প থেকে যখন বাসটি ছাড়ে সেখান থেকে ১০ নম্বর পর্যন্ত আমার সিটটি একবার বিক্রি হয়। আবার ১০ নম্বর থেকে ১২ নম্বর পর্যন্ত আরেকবার বিক্রি হয়। আমি নেমে যাওয়ার পর ওই সিটটি আবার বিক্রি হয়। অথচ বাসটি শুরু থেকে গন্তব্য পর্যন্ত যত ভাড়া তার সবটাই আমার কাছ থেকে নিয়ে নেয়। যে পথটা আমি গেলাম না, তার ভাড়া আমি কেন দেব প্রশ্ন রেখে অসহায় যাত্রীটি আবারও বলেন, ''প্রথম দিকে অনেক কষ্ট হতো, কিন্তু কি করার আছে, কেউ তো এই বিষয়টার দিকে তাকায় না। তাই কষ্ট হলেও কারও কি যায় আসে।''

রাজধানীর ইসিবি চত্বর থেকে শেওড়া বাজার যাতায়াত করেন মামুন নামের এক গার্মেন্টস শ্রমিক। তিনি জানান, তাকে শুধু জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার পার হতেই দিতে হয় ২৫ টাকা। তিনি অনেকটা ক্ষোভের সুরে প্রশ্ন রেখে বলেন, ''বলুন তো, এক কিলোমিটারের ভাড়া কি ২৫ হতে পারে।''

কেবল মামুন কিংবা শরীফ নয়, প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হওয়া সবারই একই কথা। আবার শুধু মিরপুর থেকে উত্তরা কিংবা বাড্ডা রোডে নয়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে দেখা যায়, চিটিং সার্ভিসের এমন ভয়াল রূপ দেখা মেলে মিরপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া পল্টন, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, নিউমার্কেট-আজীমপুর কিংবা সদরঘাটের রোডেও। এসব রোড়ে যাতায়াতের জন্য গাড়িতে উঠলেই যাত্রীকে গুণতে হয় ২৫ থেকে ৩০ টাকা। অথচ প্রায় প্রত্যেকটি বাসেই দাঁড়ানো যাত্রী দেখা যায়। দেখা মেলে যেখান সেখান থেকে যাত্রী উঠাতেও।

এদিকে, সিটিংয়ের নামের চিটিং সার্ভিসের এমন অর্থ আত্মসাতের সুযোগ দেখে অনেক লোকাল সার্ভিস তাদের গাড়িতে রং করে চিটিং ব্যবসা শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে গাজীপুর থেকে সদরঘাট রোডে এমন লোকাল বাসের সিটিং সার্ভিস চালু করতে দেখা যাচ্ছে। যাত্রীদের প্রশ্ন, রাজধানীতে সব যদি সিটিং সার্ভিসই হয়, তাহলে দু'এক কিলোমিটারের যাত্রীরা কি পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌছবে?

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর