শনিবার, ২২ জুন, ২০১৩ ০০:০০ টা

সিলেটে বিএনপির ঐক্যে ভাঙনের সুর, আওয়ামী লীগে সন্দেহ

সিটি নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি

সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দ্বিধাবিভক্ত সিলেট বিএনপিতে দেখা দিয়েছিল নাটকীয় ঐক্য। সেই ঐক্যে ভর করে সিটি নির্বাচনে বাজিমাত করে বিএনপি। প্রথমবারের মতো বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী সিলেট সিটির মেয়র নির্বাচিত হন। তবে নির্বাচন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিএনপির 'নাটকীয় ঐক্যে' বিভক্তি দেখা দিতে শুরু করেছে।

অপরদিকে সিটি নির্বাচনে পরাজয়ের ফলে 'ঐক্যবদ্ধ' সিলেট আওয়ামী লীগে দেখা দিয়েছে সন্দেহ-অবিশ্বাস। নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ কর্মীরা। শীর্ষ নেতাদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে মানসিক দূরত্ব।

জানা যায়, গত জোট সরকারের আমলে বিভক্তি দেখা দেয় সিলেট বিএনপিতে। প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান ও নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর বলয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে বিএনপি। এ সময় বিএনপির দুই পক্ষের অভ্যন্তরীণ বিরোধে সিলেটে সংঘাত-সংঘর্ষ ছিল নিত্তনৈমিত্তিক ঘটনা। দলের বিভক্তির কারণেই গত সংসদ নির্বাচনে সিলেটে ভরাডুবি ঘটে বিএনপির। সাইফুর রহমানের মতো হেভিওয়েট প্রার্থীও পরাজিত হন। এরপর সিলেট বিএনপিতে ঐক্য ফেরানোর জন্য নানামুখী প্রচেষ্টা চালানো হলেও তা সফল হয়নি। কেন্দ্রীয় নেতারাও একাধিকবার উদ্যোগ নিয়ে সিলেট বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করতে ব্যর্থ হন। পক্ষান্তরে বিভক্তি বাড়ে বিএনপিতে। তবে এবার সিটি নির্বাচনের আগে সিলেট বিএনপিতে নাটকীয় ঐক্য তৈরি হয়। সিটি নির্বাচনে আরিফকে বিএনপির সমর্থন দেওয়ার আগের দিন পর্যন্ত তার বিরোধিতা করেছিলেন সিলেট বিএনপির বেশিরভাগ নেতাই। তবে বিএনপি আরিফকে সমর্থন দেওয়ার পরপরই বদলে যায় দৃশ্যপট। বিএনপি চেয়ারপারসনের হস্তক্ষেপে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আরিফের পক্ষে মাঠে নামেন সিলেট বিএনপির সব নেতারা। সেই নাটকীয় ঐক্যে নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করেন আরিফুল হক চৌধুরী।

তবে নির্বাচন শেষ হতে না হতেই আবার ভাঙনের সুর বেজে উঠেছে সিলেট বিএনপিতে। নবনির্বাচিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেছেন জেলা ও মহানগর বিএনপির বেশিরভাগ নেতা। ফলে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ১৮ দলীয় জোটের সভায় বেশিরভাগ বিএনপি নেতাই ছিলেন অনুপস্থিত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর বিএনপির এক নেতা জানান, নির্বাচিত হওয়ার পর আরিফুল হকের প্রতি দলীয় নেতাদের ক্ষোভ বাড়ছে। গত জোট সরকারের আমলে নগর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি থাকাকালেও তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের চাইতে জামায়াত-শিবিরকে বেশি প্রাধান্য দিতেন। এবারও নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি জামায়াত-শিবিরকে বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করেছেন এবং দলে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্টার চেষ্টা করছেন। এ কারণে দলীয় নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ফলে গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ১৮ দলীয় জোটের সভায় বিএনপির অনেক নেতাই উপস্থিত হননি।

এদিকে সিটি নির্বাচনে বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের পরাজয়ে সিলেট আওয়ামী লীগে দেখা দিয়েছে সন্দেহ-অবিশ্বাস। কর্মীদের অনেকেই মনে করেন, আওয়ামী লীগের অনেক নেতাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই পরাজয় বরণ করতে হয়েছে কামরানকে। দলীয় প্রার্থী কামরানের বিরুদ্ধেও কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা কাজ করেছেন বলে অভিযোগ আছে। এমন অভিযোগে দলের ভেতরে দেখা দিয়েছে সন্দেহ।

সিলেট জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, বিএনপির ঐক্য এখনো অটুট আছে, আগামীতেও থাকবে।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, দলে কোনো বিভক্তি বা সন্দেহ নেই। তবে সিটি নির্বাচনে পরাজয়ের ফলে নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

সর্বশেষ খবর