বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুত চট্টগ্রাম

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুত চট্টগ্রাম

উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় কোমেনের আঘাত থেকে রক্ষায় প্রস্তুত চট্টগ্রাম। ইতোমধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে নগর ও জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। উপকূলীয় পাঁচ উপজেলার প্রায় ৫৪ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া এবং মাইকিং করে উপকূলবাসীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হয়েছে। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগে অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষা বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ২৭৮টি টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলেছে জেলা প্রশাসন ও চসিক।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় 'কোমেন' আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫০ কি. মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৫ কি. মি. উত্তর-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২০০ কি. কি. পূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৫ কি. মি. পূর্ব-উত্তর পূর্বে অবস্থান করছিল। এটি আজ মধ্যরাতে সন্দ্বীপের কাছ দিয়ে চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে। অতিক্রম করার পর এটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কি. মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৬২ কি.মি. যা ঝড়োহাওয়ার আকারে ৮৮ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত এবং মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’ এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকার এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর সমূহে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ হতে ৫ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছাসে প্লাবিত হতে পারে।  

সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, চসিক পরিচালিত সকল স্কুল ও কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে সেখানে দুর্যোগ মুহূর্তের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, চসিকের বাস, এ্যাম্বুলেন্সসহ অন্যান্য যানবাহন প্রস্তুত রাখা, শুকনো খাবার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করে সেগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার, উপকূলীয় এলাকার কাউন্সিলরদের জরুরি মুহূর্তের জন্য প্রস্তুত থাকাসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের পাঁচ উপকূলীয় উপজেলায় ২৩৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৫৩ হাজার ৪২০ জন আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে সন্দ্বীপ ৬২টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৯,৩০০ মানুষ, বাঁশখালীতে ১০০টিতে ৩০ হাজার মানুষ, আনোয়ারায় ২০টিতে ৮,৪৯০ মানুষ, সীতাকুন্ডে ২০টিতে ২৩০ মানুষ ও মিরসরাইয়ে ২৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৫৪০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তাছাড়া উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা, মানুষ ও গবাদি পশুর নিরাপদ আশ্রয়, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের বলা হয়েছে। একইসঙ্গে সিভিল সার্জন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগকেও যথাসময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মো. শাহরিয়াজ বলেন, সন্দ্বীপ, বাঁশখালী, আনোয়ারা, সীতাকুন্ড ও মিরসরাই উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বাস করা মানুষদের ইতোমধ্যে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। যারা এখনো সরে যায়নি তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে মাইকিং করা হয়েছে। মা-শিশুদের থাকার জন্য পৃথক ব্যবস্থা, শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

 

বিডি-প্রতিদিন/৩০ জুলাই ২০১৫/এস আহমেদ

সর্বশেষ খবর