শনিবার, ১১ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

কলেজে ভর্তি হতে আবেদন করেনি দেড় লাখ শিক্ষার্থী

প্রযুক্তির সংকটকে দায়ী করছেন শিক্ষাবিদ

আকতারুজ্জামান রুনকি

এসএসসি ও সমমানে গত বছর উত্তীর্ণ হয়েছিল ১২ লাখ ৮২ হাজার ৬১৮ জন শিক্ষার্থী। সে সময় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিতে আবেদন করেছিল ১১ লাখ ৫৬ হাজার ২৫৩ জন শিক্ষার্থী। আবেদনের বাইরেই থেকে গিয়েছিল ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৬৫ জন ছাত্র-ছাত্রী। এ বছর আবেদন না করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে গত বছরের চেয়ে ২৫ হাজারের বেশি। এসএসসি ও সমমানে ১৪ লাখ ৫২ হাজার ৬০৫ জন পাস করে কলেজে এ বছর ভর্তির জন্য আবেদন করেছে ১৩ লাখ ১ হাজার ৯৯ জন ছাত্রছাত্রী। সে হিসাবে ১ লাখ ৫১ হাজার ৫০৬ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তির জন্য আবেদন করেনি। গত বছরের তুলনায় এ বছর কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে আবেদন না করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ২৫ হাজার ১৪১ জন। চলতি বছর কলেজে ভর্তিতে আবেদনের সময় গতকাল সকালে শেষ হয়েছে। শেষ সময় পর্যন্ত এ বছর এসএসসি ও সমমানে উত্তীর্ণ দেড় লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেনি। বিপুল এই শিক্ষার্থী ভর্তিতে আবেদন না করার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অনলাইনে আবেদন পদ্ধতি হওয়ায় অনেক ছাত্রছাত্রী আবেদন করতে পারেনি বলে আমি মনে করি। অনেক এলাকায় ইন্টারনেট সহজলভ্য নয়। মোবাইল সহজলভ্য হলেও তাতে ইন্টারনেট চালিয়ে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। এসএমএসে ভর্তির সুযোগ থাকলেও অনেকে হয়তো প্রক্রিয়া বুঝতে পারেনি। তাই অনেক ছাত্রছাত্রী আবেদন করতে পারেনি। আবেদন না করা শিক্ষার্থীদেরও ভর্তির সুযোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন এই শিক্ষাবিদ।

গতকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত আবেদনের নির্ধারিত সময় শেষে আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির কলেজ পরিদর্শক মো. আশফাকুস সালেহীন জানান, মোট ১৩ লাখ ১ হাজার ৯৯ জন ছাত্র-ছাত্রী এ বছর কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেছে। আবেদন করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনলাইনে ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৯৪৭ জন ও মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে ৪ লাখ ৫ হাজার ৮৬৮ জন রয়েছেন। ভর্তিচ্ছুদের আবেদনের শেষ সময় ছিল বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত। বিপুল শিক্ষার্থী আবেদনের বাইরে থাকায় গতকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু দেড় লাখের বেশি শিক্ষার্থী আবেদনের বাইরেই থেকে গেছে। এদিকে অনেক শিক্ষার্থী মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে টাকা জমা দিলেও অনলাইনে ভর্তির আবেদন করেননি। তবে এসব শিক্ষার্থীর সংখ্যা কত তা নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট মনজুরুল কবীর। কলেজে ভর্তিতে আবেদন না করা শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে কিনা জানতে চাইলে আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, অনেক শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ডিপ্লোমা পড়ার আগ্রহ দেখান। এ ছাড়া কিছু ছাত্রছাত্রী ঝরে পড়ে। কেউ বাল্যবিবাহের শিকার হয়। এ ছাড়াও অনেক কারণ থাকতে পারে কলেজে ভর্তিতে আবেদন না করার পেছনে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডিপ্লোমা প্রোগ্রামে বোর্ডের অধীন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম এনালিস্ট এ কে এম শামসুজ্জামান গতকাল জানান, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত আগ্রহী শিক্ষার্থীরা ডিপ্লোমা প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। কলেজগুলোতে কত আসন রয়েছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শামসুজ্জামান বলেন, সরকারি পলিটেকনিকে প্রায় ৫৭ হাজার আসন রয়েছে। তবে বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে কত আসন রয়েছে তা নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি তিনি। তিনি আরও জানান, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে গত তিন বছরে উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীরা ও বেসরকারি পলিটেকনিকে গত ২০০৭ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এসএসসি ও সমমান উত্তীর্ণরা আবেদন করতে পারবেন। জানা যায়, সারা দেশে প্রায় সাড়ে চার হাজার কলেজ রয়েছে। আর এতে আসন সংখ্যা রয়েছে প্রায় ১৯ লাখ। আগামী ১৬ জুন একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিতে আবেদনের ফল প্রকাশ করা হবে। ১৮ থেকে ২২ জুন পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবে। অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি হওয়া যাবে ২৩ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত। আগামী পহেলা জুলাই কলেজগুলোতে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরুর পর ১০ থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত বিলম্ব ফি দিয়ে ভর্তি হতে পারবে ছাত্রছাত্রীরা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর