শিরোনাম
সোমবার, ৪ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

আতর টুপির দোকানে শেষ মুহূর্তের ভিড়

মোস্তফা মতিহার

মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর কড়া নাড়ছে দরজায়। শাড়ি, পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, জুতা, জুয়েলারি, কসমেটিকসহ সব ধরনের কেনাকাটা এখন শেষ পর্যায়ে। এরপর বাকি ছিল ঈদের সর্বশেষ অনুষঙ্গ টুপি, তসবিহ, জায়নামাজ, আতর। যার কারণে এসব দোকানে বেড়ে গেছে ভিড়। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম ও এর আশপাশকে ঘিরে গড়ে উঠেছে রাজধানীর টুপি, জায়নামাজ, আতর ও তসবিহর বাজার। গতকাল এ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সেরা ডিজাইনের টুপি ও জায়নামাজ এবং আকর্ষণীয় পাথরের তসবিহ ও মোহময় সুগন্ধীর আতর কিনতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। বায়তুল মোকাররম মার্কেটের বরকতি আতর ঘরে ঈদের সমাহারে রয়েছে নান্দনিক সব টুপি, তসবিহ, জায়নামাজ ও হৃদয় হরণ করা দেশি-বিদেশি আতরের সব আইটেম। বরকতি আতর ঘরের স্বত্বাধিকারী আবদুল গাফফার জানান, পবিত্রতার রঙে নিজেদেরকে রাঙাতে ক্রেতারা টুপি, জায়নামাজ, তসবিহ ও আতরের সেরাটাই কিনে নিচ্ছেন। টাকার চেয়ে ক্রেতারা এখন সেরা পণ্যকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। তার দোকানে রয়েছে আতরের প্রায় শতাধিক রকমের কালেকশন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মরিয়ম আতর, দেহলেল উদ, হোয়াইট আম্বার, মুখাল্লা তারপাইস, উদেল সুলতান, মাহমুদ, সাবা, বেলী, রজনীগন্ধা, এরাবিয়ান উদ ইত্যাদি। এখানে প্রতি তোলা মরিয়ম আতর ও কাশ্মীরি উদ আতরের দাম ৬ হাজার টাকা। দেহলেন উদ পাওয়া যাচ্ছে প্রতি তোলা ৬ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকায়, হোয়াইট আম্বার ২ হাজার টাকায়, মুখাল্লা তারপাইস ২ হাজার টাকায়, উদেল সুলতান ৪ হাজার টাকায়, মাহমুদ ৮০০ টাকায়, রজনীগন্ধা ও বেলী ৬০০ টাকায়। দুবাইর আজমল কোম্পানির বিভিন্ন আতর পাওয়া যাচ্ছে প্রতি তোলা ২ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে, এরাবিয়ান উদ ৩ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকায়, আবদুস ছামাদ অ্যান্ড কোরাইশ কোম্পানির আতর পাওয়া যাচ্ছে ৮ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকায়। জায়নামাজের দিক দিয়েও এই এলাকার অন্যান্য দোকানের দিক থেকে এগিয়ে এসেছে এই দোকানটি। এখানে তুর্কি জায়নামাজ পাওয়া যাচ্ছে ৩৫০ থেকে ৭ হাজার টাকায়, শেলিন জায়নামাজ ৩৫০ থেকে ৮৫০ টাকায়, আইরিন জায়নামাজ ৯০০ থেকে ৭ হাজার টাকায়, পাকিস্তানি জায়নামাজ ৫০০ টাকায়। টুপির মধ্যেও বাহারি ডিজাইনের টুপির সমাহার নিয়ে এসেছে বরকতি আতর ঘর। দোকানের স্বত্বাধিকারী জানান চায়না, সৌদি, পাকিস্তানি, ইন্ডিয়ান, মালয়েশিয়ানসহ বিভিন্ন দেশের টুপি পাওয়া যাচ্ছে ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকায়। এর মধ্যে চায়না টুপি পাওয়া যাচ্ছে ১০০ টাকায়, সৌদি টুপি ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়, ইন্ডিয়ান বুরি টুপি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়, মালয়েশিয়ান টুপি ৬০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। এ ছাড়া এই দোকানে তসবিহর কালেকশনও মনোহর ও দৃষ্টিনন্দন। এখানে তসবিহ পাওয়া যাচ্ছে সর্বনিম্ন ৫০ থেকে ৭ হাজার টাকায়। এর মধ্যে আকিক তসবিহ পাওয়া যাচ্ছে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায়, ইউসার পাথরের তসবিহ ৪ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকায়, ফাইবার তসবিহ ৫০ থেকে ১৫০ টাকায়, কাঠের তসবিহ ১০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়, পোক তসবিহ ২ হাজার টাকায়, মরিয়ম তসবিহ ২ হাজার ৫০০ টাকায়, জয়তুন তসবিহ ১ হাজার ৫০০ টাকায়। বায়তুল মোকাররম এই মার্কেটটি ছাড়াও মসজিদের উত্তর গেটেও রয়েছে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে আতর, টুপি, তসবিহ ও জায়নামাজের বিভিন্ন দোকান। উত্তর গেটে টুপির পসরা সাজিয়ে বসেছেন ষাটোর্ধ্ব আবদুল হাই। তিনি জানান, বাচ্চাদের ও বড়দের সববয়সীদের টুপিই রয়েছে তার কালেকশনে। কালেকশনে রয়েছে নেট টুপি, মিরাঠি টুপি, হাজী টুপি, লেইস টুপি ইত্যাদি। এই দোকানটিতে বাচ্চাদের টুপি পাওয়া যাচ্ছে ৫০ থেকে ১৫০ টাকায়। আর বড়দের টুপি পাওয়া যাচ্ছে ৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। এর মধ্যে নেট টুপি পাওয়া যাচ্ছে ৩০০ টাকায়, হাজী টুপি ৫০ থেকে ১ হাজার টাকায়, বিভিন্ন ধরনের নরমাল টুপি ৬০ থেকে ১৫০ টাকায়। মসজিদ থেকে বের হওয়ার আরেকটি প্রবেশ পথে রয়েছে আল-গিলানি আতর হাউস নামের একটি আতরের দোকান। এই দোকানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের তসবিহ ও আতর। আল-গিলানি আতর হাউসের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ রিপন হোসেন জানান, কোয়ালিটি ও সততার সঙ্গেই তিনি দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছেন। এর আগে এখানে তার বাবা ৪০ বছর ধরে এই ব্যবসা করেন। এখানে সোলেমানি আকিক তসবিহ পাওয়া যাচ্ছে ৩০০ থেকে ২ হাজার টাকায়, কাঁচ পাথরের তসবিহ ৩০ থেকে ২৫০ টাকায়, কাঠের পাকিস্তানি তসবিহ ২০ থেকে ৮০ টাকায়, স্যামসোতারা তসবিহ ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়, ক্রিস্টাল তসবিহ ৬০ থেকে ২৫০ টাকায়, আকিক পাথরের তসবিহ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। এ ছাড়া এই দোকানে আতরের রয়েছে হরেক রকমের কালেকশন। দোকানে উদ প্রতি তোলা বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার টাকায়, আল-শাফা আতর প্রতি আউন্স ৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, বেলী বকুল ও রজনীগন্ধা আতর পাওয়া যাচ্ছে আউন্স প্রতি ৫০ থেকে ৩০০ টাকায়, জেসমিন আতর ৩ এম এল ৮০ টাকায়, হোয়াইট উদ ছোট শিশি ১০০ থেকে ৩০০ টাকায়, চকলেট মাস্ক ১০০ টাকায়, সুলতান ৩ এম এল ৮০ টাকায়, সূর্যমুখী ও মারিয়া ৩ এম এল ১০০ টাকায়, দালাল ও রয়েল মেরিস ৩ এম এল ৮০ টাকায়। দোকানি জানান, প্যাকেটের আতরের চেয়ে খোলা আতরের দাম অনেক বেশি। ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, দুবাই ও ইন্ডিয়া থেকে তিনি বিভিন্ন নামি-দামি ব্র্যান্ডের খোলা আতরগুলো সরাসরি আমদানি করে থাকেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের মৌলভীবাজার অঞ্চলের আগর থেকে তৈরি উদ আতরকে সেরা বলেও মনে করেন এই আতর বিক্রেতা। আতর ও তসবিহ ছাড়াও সুরমাও পাওয়া যাচ্ছে এই দোকানে। মিসরি সুরমা প্রতি তোলা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ১০০ টাকায়, পাকিস্তানি নুরি সুরমা ১০০ টাকায় ও আশমি সুরমা ২৫০ টাকা তোলায়। এই এলাকার অন্য একটি টুপির দোকানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের টুপির সমাহার। হাজী টুপি পাওয়া যাচ্ছে ১০০ থেকে ৬০০ টাকায়, ওমানি টুপি ৬০০ থেকে ৬ হাজার টাকায়, জালি টুপি ৫০ থেকে ৩০০ টাকায়, লম্বা আদি টুপি ৩০ থেকে ৫০ টাকায়, মালয়েশিয়ান টুপি ১০০ থেকে ৬০০ টাকায়, চায়না টুপি ২০ থেকে ১০০ টাকায় ও তুর্কি ৬০ থেকে ২০০ টাকায়। এই দোকানের স্বত্বাধিকারী আবুল খায়ের জানান, বিকিকিনি নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট। দুই-এক দিনের মধ্যে বিক্রি আরও বাড়বে বলেও জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর