শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নকল লুব্রিক্যান্টসের ছড়াছড়ি

প্রতারিত হচ্ছেন ব্যবহারকারীরা

আলী আজম

রাজধানীতে চলাচলরত যানবাহনে ৩৫ থেকে ৪০ ভাগ নকল লুব্রিক্যান্টস (মবিল, গিয়ার অয়েল ও ব্রেক অয়েল) ব্যবহূত হচ্ছে। এর ফলে গাড়ির আয়ুষ্কাল কমে যাওয়াসহ দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার আশায় এ ধরনের অবৈধ ব্যবসায় মেতে উঠেছেন। পুরান ঢাকা ও সাভারের বেশ কয়েকটি স্থানে গড়ে উঠেছে এসব নকল লুব্রিক্যান্টস কারখানা। সেখানে পাইকারি দোকানও রয়েছে। এ চক্রটি বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ড্রাম ও জারে নকল লুব্রিক্যান্টস ভরে রাজধানীসহ সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এর ফলে গ্রাহক একই দামে পণ্য কিনে প্রতারিত হচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অসাধু ব্যবসায়ীরা কেরোসিন তেলের সঙ্গে প্লাস্টিক পলিমার ও পোড়া মবিল কড়াইতে গরম করে তৈরি করছেন নকল মবিল। পরে ডিজেল ও খোলা ড্রামে রিসাইকেলকৃত মবিল মিশিয়ে ভিসকো, হোন্ডা, সুপার-ভি, ক্যাস্ট্রলসহ নামিদামি ব্র্যান্ডের ড্রাম ও জারে ভর্তি করা হয়। হুবহু একই রকম লেবেল লাগিয়ে ড্রামে এবং ১ লিটার, ২ লিটার, ৫ লিটার জারে ভরে বাজারজাত করা হচ্ছে নকল লুব্রিক্যান্টস।

সূত্রে আরও জানা গেছে, নকল লুব্রিক্যান্টস প্রস্তুতকারকরা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পুরনো ড্রাম ও জার বাজার থেকে সংগ্রহ করছেন। এ ছাড়া কয়েকটি কারখানায় এসব ড্রাম ও জার তৈরি হচ্ছে। সংগ্রহ করা হচ্ছে যানবাহনের পোড়া মবিল। এসব মবিল রিসাইক্লিং করে নকল লুব্রিক্যান্টস তৈরি করা হচ্ছে। এসব লুব্রিক্যান্টস (পোড়া মবিল) গার্মেন্টসের মেশিন অয়েল হিসেবেও ব্যবহার করায় গার্মেন্টসের যন্ত্রপাতি দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। র‌্যাব সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে নকল লুব্রিক্যান্টস জব্দ করতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, সোয়ারীঘাট, গেন্ডারিয়া ও নবাবপুরে আটট অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অভিযানে ৪২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা জরিমানাসহ ২ কোটি ২৭ লাখ টাকার লুব্রিক্যান্টস জব্দ করা হয়। এতে ২৫টি মামলায় ২৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। সাতজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তিন মাস থেকে এক বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম বলেন, বাজারে ৩৫ থেকে ৪০ ভাগ নকল লুব্রিক্যান্টস রয়েছে। লুব্রিক্যান্টস একটি গাড়ির ঘর্ষণজনিত স্থান পিচ্ছিল ও ক্ষয়রোধ করে। কিন্তু নকল লুব্রিক্যান্টস ব্যবহারের ফলে গাড়ির ঘর্ষণজনিত স্থান পিচ্ছিল না হয়ে ক্ষয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, গরম হয়ে যাচ্ছে।

লুব্রিক্যান্টস আমদানিকারক একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার বলছেন, বিদেশ থেকে লুব্রিক্যান্টসের একটি ড্রাম আমদানিতে খরচ পড়ছে ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু নকল লুব্রিক্যান্টস উৎপাদন করে হুবহু একই রকম লেবেল লাগিয়ে তা অর্ধেক দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে গ্রাহক প্রতারিত হচ্ছেন। গত পাঁচ বছরে নকল লুব্রিক্যান্টস বাজারে বেশি ছড়িয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের রুখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনিটরিং বাড়াতে হবে।

সর্বশেষ খবর