বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

থমকে আছে উন্নয়ন

মাহবুব মমতাজী

থমকে আছে উন্নয়ন

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫১ নম্বর ওয়ার্ড। ২০১৫ সালের নির্বাচনে নানা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাউন্সিলর হয়েছিলেন কাজী হাবিবুর রহমান হাবু। গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর সায়েদাবাদে সিটি করপোরেশনের ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদে বাধা দেওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এর পরই তিনি তার এলাকায় যে কোনো ধরনের উন্নয়নকাজে বাধা দিয়ে যাচ্ছেন। এই অভিযোগ করেছেন খোদ সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাজী মো. মাসুদ।

জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিজের ওয়ার্ডের পাশাপাশি সেখানকার দায়িত্ব পালন করাটাও খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত দায়িত্ব পাওয়ার পর ওই এলাকায় যাওয়া আমার জীবনের জন্যও হুমকি হয়ে গেছে। যেন আমি সেখানকার আগের কাউন্সিলরের শত্রু হয়ে গেছি। যে কারণে ওয়ার্ডটির কোনো উন্নয়নমূলক কাজে হাত দিতে পারিনি।’

এ ওয়ার্ডে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় ১২ হাজার মানুষের বসবাস। অন্যান্য সমস্যার তুলনায় এখানকার ছিনতাই আর জলাবদ্ধতাই মুখ্য। এক যুগেও এসবের সমাধান করেননি কেউ। আশ্বাসেই পুড়েছে বাসিন্দাদের কপাল। ১২ মাস ধরে কাদাপানির সঙ্গে বসবাস করে আসছে মীরহাজিরবাগ মধ্যপাড়ার শাহ জালাল রোডের (কাওছার গলি) দুই পাশের মানুষ। নবাব আলী নামের এক বাসিন্দা জানান, বর্ষার সময় এখানকার টিনশেড ঘরেও বন্যার মতোপানি ঢোকে। অন্যান্য সময়ে আঙিনায় জমে থাকে পানি। বাড়িওয়ালারা এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কারও কাছে অভিযোগও করেন না। তবে মোয়াজ্জেম হোসেন নামে এক বাড়িওয়ালা বলেন, একাধিকবার গ্যাস-পানি ও স্যুয়ারেজ লাইনের সমস্যার বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। কিছু লোক এসে লাঠি দিয়ে ড্রেন পরিষ্কার করে চলে যায়। তবুও রাস্তা ও বাড়ির আঙিনায় পানি জমে থাকে। এলাকাটির আয়রন গলির বাগিচা মসজিদের দক্ষিণ পাশ ঘেঁষা প্রায় তিন বিঘার একমাত্র পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে। সেখানে ট্রাকে ট্রাকে বালু এনে ফেলা হচ্ছে। এ বিষয়ে আবদুল মতিন নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘শুনেছি এ পুকুরটি কাজিম নামের এক লোকের। তিনি এখানে বহুতল মার্কেট করবেন বলে বালু দিয়ে ভরাট করাচ্ছেন।’ জানা গেছে, মাদক ও সন্ত্রাসের আখড়া হিসেবে এই এলাকার দুর্নাম বেশ পুরনো। দয়াগঞ্জ থেকে ধোলাইর পাড় পর্যন্ত নতুন রাস্তাটিতে প্রায় প্রতিদিনই ঘটে ছিনতাইয়ের ঘটনা। একাধিক ব্যক্তি এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পরও পাননি কোনো প্রতিকার। সন্ধ্যা নামার পরই শুরু হয় ছিনতাইকারীদের আনাগোনা। মীরহাজিরবাগ কাঁচাবাজারে ছিনতাইয়ের প্রত্যক্ষদর্শী শরীফ নামের এক ওষুধের দোকানি জানান, মাগরিবের নামাজ শেষে দয়াগঞ্জ মোড় থেকে কাঁচাবাজারের দিকে রিকশায় করে আসার পথেই ঘটে ছিনতাইয়। আর এর ভুক্তভোগী বেশির ভাগই থাকেন নারী। যখন তারা আসেন তখন তাদের অনুসরণ করে পেছন থেকে মোটরসাইকেলে করে দুজন লোক এসে হাতের ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। সরেজমিনে দেখা গেছে, মীরহাজিরবাগ কাজীবাড়ীর ২২১ নম্বর গলির তামিরুল মিল্লাত এতিমখানায় বাসানো হয়েছে রিকশা-ভ্যানের গ্যারেজ। সঙ্গে এতিমখানার ঘরগুলোও ভাড়া দেওয়া হয়েছে ছোটখাটো গার্মেন্ট ও ফার্নিচার ব্যবসায়ীদের। এ বিষয়ে এতিমখানার সুপার আবদুল মান্নান জানান, ‘এটি কাজীবাড়ী মসজিদের ওয়াকফ করা জায়গা। তাদের জায়গা ভাড়া নিয়েই চলত এতিমখানা। পরে তারা পাশে আরেকটি জায়গা দিয়েছেন এতিমখানার জন্য।’ ওই মসজিদের সভাপতি ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী মনিরুল ইসলাম মনু জানান, ‘ওই জায়গাটি মসজিদের। মসজিদ কর্তৃপক্ষ এতিমখানাকে পাশেই আরেকটি জায়গা দিয়েছে। আর যেখানে আগে এতিমখানা ছিল তা ভাড়া দিয়েছে। সেই আয় দিয়েই মসজিদ পরিচালনা করা হয়।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর