সোমবার, ১২ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাজেটে বিরাট অঙ্কের ধাপ্পাবাজি : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ঘোষিত সদ্য বাজেট প্রস্তাবকে ‘বিরাট অঙ্কের ধাপ্পাবাজি’ আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। সেই সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাটের হার কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে আনার পাশাপাশি ব্যাংক আমানতের ওপর বর্ধিত হারে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব বাতিলের দাবি জানিয়েছে দলটি। গতকাল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এই বাজেট নিছক বিরাট অঙ্কের প্রচারণার ধাপ্পাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। এটা মানুষকে বোকা বানানো ও প্রতারণার বাজেট।’ গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ।

১ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাবের ১০ দিন পর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এলো বিএনপি থেকে। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাজেট দেখে তার মনে হয়েছে, কল্যাণমুখী লক্ষ্যগুলো অর্থমন্ত্রীর বিবেচনায় আসেনি। বাজেটে উপেক্ষিত থেকেছে মানবসম্পদ খাত, এমনকি কৃষিও। প্রাধান্য পেয়েছে চোখ ধাঁধানো কিছু মেগা প্রকল্প। স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ প্রয়োজনীয় ও জনকল্যাণমূলক খাতসমূহকে অবহেলা করা হয়েছে। এ কারণে আমরা আশাহত ও ক্ষুব্ধ। জনগণের কাছে সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই বলেই এই বঞ্চনার বাজেট। এটি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এই বাজেট আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বাজেটের কিছু প্রস্তাব দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাকে বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে। লোকের চোখে দৃশ্যমান উন্নয়ন করতে গিয়ে দ্বিগুণ-চারগুণ অর্থ ব্যয় করে একদিকে সম্পদের অপচয় ঘটানো হচ্ছে, অন্যদিকে দুর্নীতির সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্প গ্রহণের স্বচ্ছতা বজায় রাখা হচ্ছে না। প্রকল্প ব্যয়ে স্বচ্ছতা নেই। ব্যয়ের গুণগত মান বজায় রাখা হচ্ছে না। মুহিতের এই বাজেটে ব্যয়ের গুণগত মান বাড়ানোর কোনো দিকনির্দেশনা নেই।’

তিনি বলেন, ‘বাজেট ঘাটতি পূরণে বিদেশি উৎস থেকে প্রাপ্তি ৮০ শতাংশ বেশি হবে বলে যে প্রত্যাশা অর্থমন্ত্রী করেছেন, তা অসম্ভব ও কল্পনাপ্রসূত। মনে হচ্ছে, বাজেট প্রণয়নকারীরা নিছক হিসাবের অঙ্ক মেলাতে গিয়ে তাদের পছন্দসই সংখ্যাটি বসিয়ে দিয়েছেন। একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান মন্তব্য করেছে, অর্থায়নের সব উৎস দেখার পর যখন ব্যয়ের হিসাব মিলছে না, তখন পুরোটাই বৈদেশিক সাহায্য থেকে আসবে বলে ধরে নিয়ে যোগ করে দেওয়া হয়েছে।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার পরিসংখ্যানজনিত বিভ্রাট ঘটিয়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বাড়িয়ে দেখানোর সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। প্রশ্নবিদ্ধ জিডিপি প্রবৃদ্ধি দেখিয়ে নীতিনির্ধারকরা এক ধরনের আত্মতুষ্টির রোগে ভুগছেন।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন,  ‘যেভাবে বিভিন্ন পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে, তা সাধারণ মানুষের পকেট থেকে জোর করে অর্থ আদায়ের মতো।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘বিএনপির সময়ের বাজেটগুলো দেখবেন, অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় উন্নয়ন খাতের ব্যয়ের তুলনায় শতকরা হারে সর্বনিম্ন পর্যায়ে আমরা রেখেছি। আর এখন বাজেটে অনুন্নয়ন খাতের ব্যয় বেশি রাখা হয়েছে বলেই তা কখনো স্বাস্থ্যকর বাজেট হতে পারে না।’

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাজেটে যে প্রবৃদ্ধির হার দেখানো হয়েছে, তা প্রশ্নবিদ্ধ।’

সর্বশেষ খবর