মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

উচ্চশিক্ষার নামে মানব পাচার

মালয়েশিয়ার রাস্তায় রাস্তায় বাংলাদেশি ছাত্ররা

নিজস্ব প্রতিবেদক

উচ্চশিক্ষার নামে বাংলাদেশ থেকে বহু শিক্ষার্থীকে মালয়েশিয়ায় পাচার করা হচ্ছে। ‘এজেন্ট’ ধরে প্রতিবছর তারা মালয়েশিয়া যাচ্ছেন। কিন্তু এদের অনেকেই এজেন্টদের কাছে ধোঁকার শিকার হচ্ছেন। অনেকেই সেখানে যাওয়ার পর দেখছেন লাখ লাখ টাকা খরচ করে মানহীন ও ভুয়া কলেজে তাদের ভর্তি হতে হচ্ছে। ভুয়া কলেজে ভর্তি হয়েই তাদের দুঃখ শেষ হচ্ছে না। বলতে গেলে এখান থেকেই সূচনা হচ্ছে তাদের এক কষ্টকর ও মানবেতর জীবনের। মালয়েশিয়ার দ্য স্টার পত্রিকা অনুসন্ধান চালিয়ে মানব পাচারের এমন এক চক্রের সন্ধান পেয়েছে। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় পৌঁছার পর ভিকটিমরা বুঝতে পারেন, যে কলেজে তাদের ভর্তি করা হয়েছে সেখানে পড়ালেখার কোনো বালাই নেই। অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে যাওয়ার পর শিগগিরই ফিরে আসারও উপায় থাকে না। ‘ছাত্রত্ব’ টিকিয়ে রাখতে প্রায়ই তাদের কাছ থেকে বাড়তি ফি আদায় করে কলেজগুলো। আর স্টুডেন্ট ভিসা হওয়ায় বৈধভাবে রোজগারেরও কোনো সুযোগ থাকে না। ফিরতি প্লেনের টিকিটের টাকা জোগাড় করতেই হোক আর ঋণ শোধের জন্যই হোক, এদের অনেকেই বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই অমানবিক পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। সামান্য আয়ের জন্য ভিসার মেয়াদ বাড়াতে তাদের ফের দালালদের কাছেই ফিরে যেতে হয়।

মালয়েশিয়ার পত্রিকাটির অনুসন্ধানী প্রতিবেদকদের একটি দল গোপনে তদন্ত চালিয়ে ছাত্র পাচারকারী বেশ কয়েকটি চক্রের সন্ধান পেয়েছে। এ নিয়ে ভিডিও প্রতিবেদনও তারা তৈরি করেছে। আজ এই ভিডিও প্রতিবেদনগুলো তারা প্রকাশ করবে। প্রতিবেদক দলটি নিজেদের ফ্যাক্টরির ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে এ রকম এক দালালের সঙ্গে দেখা করে। দলটি জানায়, তারা সস্তা শ্রমিক খুঁজতে কলেজে এসেছে। তারা দেখতে পায়, পাচারকারী চক্রটি মালয়েশিয়া থেকে ঢাকা পর্যন্ত বিস্তৃত।

সাংবাদিকদের এক দালাল বলেন, তিনি এমন একজনের জন্য কাজ করেন, যার কুয়ালালামপুরে একটি কলেজ রয়েছে। তিনি একাই বাংলাদেশ থেকে আট হাজার ছাত্র পাচার করে নিয়ে আসার কথা স্বীকার করেন। নেপালি এই নাগরিক বলেন, ‘বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে সহজ শিকার। এদের কাছ থেকে টাকাও বেশি পাওয়া যায়। ২০০ থেকে ৩০০ জনকে নিয়ে এসে কলেজে ভাগ করে দাও। তারপর শুধু টাকা কামাও।’ পুরো অনুসন্ধানে পাচারের শিকার এমন ৩০ জন ছাত্রের সঙ্গে কথা বলেছে অনুসন্ধানী দল। তদন্তে তারা এমন ৩০টি কলেজের খোঁজ পেয়েছে, যাদের সঙ্গে পাচারকারীদের যুক্ত থাকার প্রমাণ রয়েছে।

একজন সাংবাদিক ছাত্র পরিচয়ে এ রকম একটি কলেজে গেলে সেখানকার এক কর্মচারী তাকে ভর্তি হতে নিষেধ করেন। ওই কর্মচারী বলেন, ‘আমাদের নিজেদের লোক (মালয়েশিয়ান) এলে ভর্তি না হতে পরামর্শ দিই আমি।’

মালয়েশিয়ায় এ রকম ভুয়া কলেজে বিদেশি ছাত্র ভর্তি নিয়ে ২০১৩ সালেও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল দ্য স্টার। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে মালয়েশিয়ার উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় পাঁচটি কলেজে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। এরপর আরও ২৬টি কলেজের লাইসেন্স বাতিল করা হয় কিংবা আর নবায়ন করা হয়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর