মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

শব্দদূষণে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

শিশু ও রোগীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ঢাকার মানুষের শ্রবণক্ষমতা প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে। আর এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানসিক অস্থিরতা, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ। সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন শিশু ও বৃদ্ধরা। এসব রোগ ও ঝুঁকির মূল কারণ হিসেবে শব্দদূষণকে চিহ্নিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকার শব্দদূষণ দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আনলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। গতকাল দুপুর ১২টা। রাজধানীর মত্স্য ভবন পার হয়ে শাহবাগ রোডে গাড়ি থামিয়ে হর্ন পরীক্ষা করছে ট্রাফিক পুলিশ। হাইড্রোলিক হর্ন লাগানো গাড়িগুলোকে এক পাশে এনে হর্ন খুলে জরিমানা করা হচ্ছে। শব্দদূষণ বন্ধে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার বন্ধ হলেও থামছে না যেখানে সেখানে অপ্রয়োজনে হর্ন বাজানোর প্রবণতা। সরেজমিনে শাহবাগ মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার দুই পাশে হাসপাতালের দেয়ালে টাঙানো রয়েছে ‘সামনে হাসপাতাল, হর্ন বাজাবেন না’। হাসপাতালে রোগযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে মানুষ। কিন্তু মুমূর্ষু মানুষের চিন্তা না করে গণপরিবহন ও প্রাইভেট গাড়ির চালকরা নির্দ্বিধায় নেমে পড়েছেন হর্ন বাজানোর প্রতিযোগিতায়। আর এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। অপ্রয়োজনে হর্ন বাজানোর প্রবণতা বন্ধ করে মানুষকে সচেতন করতে ‘আমি হর্ন বাজাই না বন্ধু’ নামে একটি সামাজিক যোগাযোগ গ্রুপ ‘হর্নমুক্ত ঢাকা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আজ বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত জাতীয় সংসদ ভবনের সামনের ফুটপাথে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচির আয়োজন করেছে তারা। ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত ১০ হাজারেরও বেশি হাইড্রোলিক হর্ন জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া নিয়ম না মানায় বেশ কিছু চালককে জরিমানা করা হয়। এ ব্যাপারে উপকমিশনার ট্রাফিক (উত্তর) প্রবীর কুমার রায় বলেন, ‘আমরা হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধে অভিযান পরিচালনা করছি এবং মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও আবাসিক এলাকায় শব্দ দূষণ করলে তাদের জরিমানা করা হয়। এজন্য ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে ১৯ মিনিটের একটি ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। এ ভিডিওটি রাজধানীর মহাখালী বাসস্ট্যান্ড, আবদুল্লাহপুরসহ ব্যস্ত এলাকা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেখানো হচ্ছে।’ শব্দদূষণের মাত্রা স্থানভেদে কেমন হবে তার নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তাদের হিসাব অনুযায়ী কোনো এলাকায় ৬০ ডেসিবেল মাত্রার বেশি শব্দ হলে তা দূষণের আওতায় পড়বে। অফিসকক্ষ ও শ্রেণিকক্ষে শব্দের মাত্রা হবে ৩০-৪০ ডেসিবেল, হাসপাতাল এলাকায় ২০-৩৫ ডেসিবেল, রেস্তোরাঁয় ৪০-৬০ ডেসিবেল শব্দমাত্রা সহনীয়। সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মণিলাল আইচ লিটু বলেন, ‘যারা বেশি সময় ধরে অতিরিক্ত শব্দের মধ্যে থাকেন তাদের আচরণ সাংঘর্ষিক হয় এবং মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। আর এর সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে শিশু ও বয়স্কদের ওপর।’

সর্বশেষ খবর