মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা
গৃহবধূ সুমনা হত্যা

অভিযোগ স্বামীর দিকেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর বনশ্রীতে গৃহবধূ জান্নাতুল বুশরা সুমনা হত্যায় তার স্বামী রাসেলকেই সন্দেহ করছে পুলিশ। গতকাল রাসেলকে আদালতে তোলার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রবিবার রাতে বনশ্রীর সি ব্লকের ৩৪ নম্বর বাসার সাততলা থেকে বুশরাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় ফরাজী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বুশরাকে মৃত ঘোষণা করেন। রাত ১২টার দিকে বুশরার বাবা মোহাম্মদ রফিক স্বামী রাসেলকে অভিযুক্ত করে রামপুরা থানায় মামলা করেন। মামলার পরই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে রাসেলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রলয় কুমার সাহা জানান, প্রাথমিকভাবে রাসেল এ ঘটনায় জড়িত বলে আমরা সন্দেহ করছি। বুশরাকে সে নিয়মিতভাবে মানসিক যন্ত্রণা দিত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বাসার কেয়ারটেকার ও রাসেলের কথার মধ্যে গরমিল পাওয়া গেছে।

 

রাসেলের চাচা সরুজ আলম এ প্রতিবেদককে জানান, ঘটনার আধা ঘণ্টা আগে বুশরা তার শাশুড়ির সঙ্গে মোবাইলফোনে কথা বলেছে। তার পেটে ব্যথা বলেও জানায়। আমরা যতদূর জানি- তাদের দাম্পত্য জীবনে কোনো ঝামেলা ছিল না। আর রাসেল এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর ছেলে না। তা ছাড়া রাসেল-বুশরা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী বিয়ে করেন। হয়তো রাগের বশবর্তী হয়ে রাসেলের বিরুদ্ধে এ মামলা দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ জানায়, ঘটনার পরই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাসার কেয়ারটেকার শামসুল ও রাসেলের বন্ধু আরমানসহ কয়েকজনকে থানায় নিয়ে আসা হয়। গতকাল শামসুলকে রেখে বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়। শামসুল তাদের জানিয়েছেন— বাসায় ওঠার পরই রাসেল নিচে নেমে তাকে দ্রুত দরজায় তালা দিতে বলে। তার বাসায় বাইরের লোক ঢুকেছে বলেও জানায়। তালা দিয়ে উপরে উঠে গিয়ে দেখি কোনো লোক নেই। আবার পাশের বাসার দুজন বাসিন্দা জানায়, নিচের দরজা লাগালেও ছাদ খোলা থাকে এবং ওই বাড়ির ছাদ দিয়ে অন্য বাড়িতেও যাওয়া যায়। রাসেলের বন্ধু আরমানের চাচা জানান, বুশরা খুব অসুস্থ তাকে হাসপাতাল নিতে হবে এই বলে আরমানকে মোবাইল ফোনে ডেকে নেয় রাসেল। রাসেল ও তার বন্ধুরাসহ বুশরাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

সে সময় বুশরার স্বামী রাসেল দাবি করেন, কোনো এক দুর্বৃত্ত বাসায় ঢুকে তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে। হত্যার আগে তাকে ধর্ষণ করা হয় বলেও তার সন্দেহ। অফিস শেষ করে বাসায় ফিরে তিনি দরজায় কড়া নাড়েন। কিন্তু ভিতর থেকে সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। বুশরার ফোনে কল দিলেও তা রিসিভ হচ্ছিল না। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকাবস্থায় দরজা খুলে এক যুবককে বেরিয়ে যেতে দেখেন। তাকে ধরতে গেলে ওই যুবক একটি ইট নিয়ে উল্টো তাকে তাড়া করেন। পরে তিনি দৌড়ে নিচে নেমে কেয়ারটেকারকে দরজা আটকাতে বলেন। দরজা লাগিয়ে উপরে উঠে দেখেন ওই যুবক পালিয়ে গেছে। এরপর বাসায় ঢুকে দেখেন বুশরার হাত-মুখ বাঁধা। গলায় কাপড় পেঁচানো। কিন্তু বুশরার বোন রোমানার অভিযোগ, অন্য কেউ না রাসেলই বুশরাকে হত্যা করেছে।

জানা যায়, রাসেল ও বুশরা দুজনই রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট-ওয়েস্ট থেকে কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেন। দেড় বছর আছে তারা বিয়ে করে বনশ্রীতে বাসা নেন। রাসেল সামসাং কোম্পানিতে চাকরি নেন। আর বুশরা একটি আইটি ফার্মে। বুশরার গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জে। রাসেলের গ্রামের বাড়ি ঢাকার দোহারে হলেও ব্যবসায়িক কারণে তার বাবা-মা থাকেন চট্টগ্রামে। 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর