শিরোনাম
বুধবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

নিয়মের বালাই নেই রেলে পদোন্নতিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

বাংলাদেশ রেলওয়েতে ১৯৭৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর চতুর্থ শ্রেণির পদে রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) ‘প্রহরী’ হিসেবে যোগদান করেন সৈয়দ আবদুল খলিল। পিএসসির অনুমোদন ছাড়াই ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি তাকে পূর্বাঞ্চল রেলের সেকশন অফিসার-১ (পূর্ব)-এর চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। মাত্র ৩ বছর ১০ মাস দুটি দায়িত্ব পালনের পর ২০১৫ সালের ১১ নভেম্বর তাকে বিভাগীয় সংস্থাপন কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়, যা এখন পর্যন্ত পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) অনুমোদন পায়নি। তাছাড়া খলিলের সার্টিফিকেট নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে রেল অঙ্গনে। একইভাবে আরও অনেকেই নিয়ম লঙ্ঘন করে পদোন্নতি নিয়েছেন। রেলের কর্মকর্তাদের অবসরে যাওয়া এবং বর্তমানে কর্মরত থাকা এমন চিহ্নিত কিছু কর্মকর্তার এসব পদোন্নতিতে ‘অনিয়মই নিয়মে’ পরিণত হয়েছে।

রেলওয়ের বিভিন্ন কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, একইভাবে ১৯৮০ সালের ১৮ আগস্ট চতুর্থ শ্রেণির ‘খালাসি’ পদে যোগদানকারী মোহাম্মদ আলীকে ২০১২ সালের ১০ অক্টোবর সহকারী পার্সোনেল অফিসারের (পাকশী) চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। ৪ বছর ৩ মাস ১২ দিন দায়িত্ব পালনের পর চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি তাকে ষষ্ঠ গ্রেডের বিভাগীয় সংস্থাপন কর্মকর্তার (ঢাকা) চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। একইভাবে এসপিও মো. সিরাজুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন অনিয়মের মাধ্যমেই পদোন্নতি নিয়েছেন। সুবিধাভোগ করছেন রেলের বরাদ্দপ্রাপ্ত বাসা এবং রয়েছে সাবলেট ভাড়াও। যা অনিয়মের অংশ। এসব বিষয় দেখেও না দেখার মতো চলছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব (ভারপ্রাপ্ত) মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে জেষ্ঠ্যতা লঙ্ঘনসহ নানা অনিয়ম হলেই যে কোনো প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ে। কেউ অভিযোগ করলে অবশ্যই তদন্তের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।  রেল সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে অবসরে যাওয়া পূর্বাঞ্চলের সিনিয়র পরিসংখ্যান কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন, এডিজির পিএস মো. আবুল কাশেম, এএও/প্রকৌশলী আবদুল গফুর মজুমদার, এসডব্লিউআই শফিকুর রহমানসহ আরও কয়েকজন নিয়ম লঙ্ঘন করে পদোন্নতি নিয়েছেন। বর্তমানে রেলের প্রথম শ্রেণির একাধিক গেজেটেড কর্মকর্তা পিএসসির অনুমোদন নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে নিম্নশ্রেণির পদে দায়িত্ব পালন করছেন অনেকেই। তাদের মধ্যে অন্যতম তিন কর্মকর্তা কালিকান্ত ঘোষ, স্নেহাশীষ দাশগুপ্ত ও ওমর ফারুক ফিডার পদে যথাক্রমে ১১ বছর, ৯ বছর ৮ মাস ও ৯ বছর ৪ মাস দায়িত্ব পালন শেষে পিএসসির প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হিসেবে অনুমোদন পান। বিভাগীয় ষষ্ঠ গ্রেডের একাধিক পদ শূন্য থাকা সত্ত্বেও পিএসসির অনুমোদনপ্রাপ্ত এসব কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে না। তাছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে এমএলএসএস, খালাসি, প্রহরী, ওয়েম্যান, পয়েন্টসম্যানসহ চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা নিয়ম লঙ্ঘন করে বিভাগীয় পদের একাধিক দায়িত্ব পালন করছেন দীর্ঘদিন ধরেই। সম্প্রতি খালি হওয়া বিভাগীয় তিনটি পদেও অন্য সুবিধাভোগীদের পদায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রসঙ্গত, রেলের প্রায় ২১ জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা (বিসিএস ক্যাডার) দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত থাকলেও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের উচ্চপদে পদায়ন করা হচ্ছে বিভিন্ন দফতরে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর