শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিএনপি আছে, নেতা নেই

চট্টগ্রামে এক সপ্তাহে হাজারেরও বেশি কর্মী কারাগারে, বাকিরা পলাতক

রিয়াজ হায়দার, চট্টগ্রাম

বিএনপি আছে, নেতা নেই

দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দী হওয়ার পর এমন দুঃসময়েও চট্টগ্রাম বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতাই মাঠে নেই। দলটির অভ্যন্তরেও নেতৃত্ব সংকটের কথা ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিএনপির এমনই পর্যুদস্ত অবস্থা যে, বিভিন্ন সময়ে আঞ্চলিক পরিচয়ে ছড়ি ঘুরানো কেন্দ্রীয় কয়েক নেতার টিকিটিও খুঁজে পাচ্ছেন না মাঠের কর্মীরা।

পুলিশের ভাষ্য মতে, মহানগর ও জেলায় গত এক সপ্তাহে একাধিক শীর্ষনেতাসহ এক হাজারের বেশি নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। এ ছাড়া জেলা ও মহানগরের অনেকেই গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। এমন অবস্থায় অনেকটা দিকভ্রান্ত মাঠের কর্মীরা। তবুও দায়িত্বশীল অনেক নেতার দাবি, মাঠে সুসংহত অবস্থায় রয়েছে বিএনপি। জিয়া এতিমখানার অর্থ আত্মসাৎ মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গ্রেফতার হওয়ার পূর্বাপর সময়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম জেলায় ৪৮২ জন নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ। অন্যদিকে মহানগরে একই সময়ে গ্রেফতার হন পাঁচশর বেশি বিএনপি নেতা-কর্মী।

দলীয় সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক গ্রেফতার অভিযানে মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ও মিরসরাই উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন গ্রেফতার হন। মহানগর সভাপতির সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করের মতানৈক্যের কারণে খালেদা জিয়া গ্রেফতারের পর তাত্ক্ষণিক বড় ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা যায়নি বলে অভিযোগ দলের মাঠ কর্মীদের। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিএনপির শীর্ষনেতারা অনেকেই চট্টগ্রামে না থাকার কারণে কার্যকর জোরদার কর্মসূচি না হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেননি উত্তর জেলা বিএনপি নেতা চাকসু ভিপি নাজিম উদ্দিন। তবে মাঠের কর্মীদের মধ্যে ঐক্য রয়েছে বলে জানান তিনি। অন্যদিকে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু সুফিয়ান ও যুগ্ম সম্পাদক আবদুল মান্নান বলেন, দলীয় প্রধানের নির্দেশনায় অহিংস আন্দোলনের পথেই রয়েছে বিএনপি। দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক শেখ মহিউদ্দিন জানান, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী মহানগর ও জেলায় আজও অহিংস অবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে। দলীয় সূত্র জানায়, বিভক্তির কারণে চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও উত্তরে বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঝুলে আছে। মহানগর যুবদল ও ছাত্রদলের ঘর গোছানো হচ্ছে না দীর্ঘদিন। অবশ্য এ জন্য বিভক্তি নয়, রাষ্ট্রের গণতন্ত্রহীনতা এবং ভিন্নমতকে দমিয়ে রাখার সরকারি অপচেষ্টাকেই দায়ী করলেন বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম। এদিকে গতকালও দিনভর নাসিমন ভবন বিএনপি কার্যালয়ে উত্তর জেলার নেতারা অবস্থান করেন। মহানগর সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর মামলার আসামি হয়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিএনপির শীর্ষনেতাদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান ঢাকায় অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। সাবেক মন্ত্রী এম মোর্শেদ খান ও সাবেক এমপি গাজী শাহজাহান জুয়েল দেশের বাইরে এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার ঢাকায় জাতীয়ভাবে সক্রিয়। আর উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরী কারাগারে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের সন্তান অন্য কয়েক কেন্দ্রীয় নেতা কোথাও সক্রিয় নন। দলের এমন দুঃসময়ে বিএনপির চট্টগ্রামের দায়িত্বশীল অনেক নেতার গা-ঢাকা দেওয়ার ঘটনায় অসন্তুষ্ট মাঠের কর্মীরা। এমন অবস্থায় সমালোচকদের মতে, বিএনপি কার্যত মাঠে নেই। কিন্তু বিএনপি নেতাদের দাবি, অহিংসভাবেই মাঠে আছেন কর্মীরা। চেয়ারপারসনের মুক্তি দাবি আন্দোলনের পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনে সুফল ঘরে তোলার কাজ করছে বলেই দলটির নেতাদের দাবি।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর