মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

কবে হবে রাবি ছাত্র লিপু হত্যার বিচার

মর্তুজা নুর, রাবি

কবে হবে রাবি ছাত্র লিপু হত্যার বিচার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মোতালেব হোসেন লিপু হত্যার ১৫ মাস অতিবাহিত হলেও খুনিদের খুঁজে পায়নি সিআইডি। এমনকি ক্লু বের করতেও ব্যর্থ হয়েছে তারা। এ অবস্থায় বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন লিপুর পরিবার, স্বজন ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আবদুল্লাহিল বাকী বলেন, ‘এটা খুবই হতাশাজনক। কত জটিল ও চাঞ্চল্যকর খুনের রহস্য বের করে পুলিশ অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসছে, কিন্তু একটি নিরপরাধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খুন হওয়ার এতদিনেও পুলিশ অপরাধী শনাক্ত করতে পারেনি। আমার ব্যক্তিগত ধারণা, এখানে কোনো রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ আছে, যার জন্য এমনটি হচ্ছে। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, ক্যাম্পাসের বাইরে যেসব খুন হয় সেগুলোর একরকম তদন্ত হয়, আর ক্যাম্পাসে যেসব খুন হয় সেগুলোর অন্যরকম তদন্ত হয়। ক্যাম্পাসে খুনের বিচার হয় না। যেন ক্যাম্পাসে খুন হওয়াটা ঐতিহ্য, আর বিচার না হওয়াটা সংস্কৃতি।’ এ প্রশ্নে এক জরিপে দেখা গেছে, স্বাধীনতাপরবর্তী ১৯৭৬ সালে প্রথমবারের মতো রক্তাক্ত হয় রাবির মতিহার চত্বর। সে বছর শিক্ষার্থী নীহার বানু হত্যাকাণ্ডের নৃশংসতায় কেঁপে ওঠে পুরো দেশ। ২৭ জানুয়ারি নিখোঁজ হওয়ার প্রায় ছয় মাস পর নাটকীয়ভাবে সামনে আসে নীহার বানু হত্যাকাণ্ডের বীভৎসতা। প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় তারই তিন সহপাঠী মিলে খুন করে লাশ ট্রাঙ্কে ভরে পুঁতে রেখেছিল। এই হত্যামামলায় মূল আসামি আহমেদ হোসেন বাবুসহ ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি আজও পলাতক। কেবল একজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এরপর ১৯৮২ সাল থেকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বাড়তে থাকে খুনের মিছিল। ৩৭ বছরে ৪০ জনের রক্তে রঞ্জিত হয় মতিহারের সবুজ চত্বর। এর মধ্যে ছাত্রলীগের সাতজন, ছাত্র শিবিরের ১৬ জন, জাসদের সাতজন, ছাত্রদলের তিনজন, ছাত্রমৈত্রীর দুজন, ছাত্র ইউনিয়নের একজন খুন হন। হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষকও। এ ছাড়াও নিহতের তালিকায় আছেন নিরীহ হকার এবং সাধারণ শিক্ষার্থী। এসব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাসে কমিটি গঠন হলেও আলোর মুখ দেখেনি তদন্ত প্রতিবেদন।

আবার রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে দলীয় বিবেচনায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে দোষীদের। তাই সুষ্ঠু বিচার কখনো পায়নি নিহতের পরিবার। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থী খুনের ঘটনা ঘটলেও এর সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার এবং রায় ঘোষণা ও তা কার্যকর হয়নি। বরং আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বেরিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা। আর এ জন্যই মতিহারের সবুজ চত্বরে রক্তের হোলিখেলা থামছে না। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আবদুল লতিফ হলের ভিতরেই খুন হন লিপু। মামলা তদন্তের দায়িত্ব দুজনের হাত বদল হয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) গেছে। হত্যাকাণ্ডের আজ ১৫ মাস পূর্ণ হলেও খুনিদের শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে সিআইডি। তবে তদন্তের দায়িত্বে থাকা সিআইডির কর্মকর্তা আসমাউল হক বলেন, ‘তদন্ত চলছে। আমরা এখনো অন্ধকারে আছি। বলার মতো মামলার কোনো অগ্রগতি এখনো হয়নি। তবে আমরা সুযোগের অপেক্ষায় আছি।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর