শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

জলাবদ্ধতা নিরসনে ধূম্রজাল

খাল খনন নিয়ে দুই সংস্থার দ্বৈত কর্মসূচি

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

আগামী বর্ষা মৌসুম সামনে রেখে চট্টগ্রাম মহানগরের ‘অভিশাপ খ্যাত’ জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরে নতুন খাল খনন ও সংস্কারে প্রকল্প গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। পক্ষান্তরে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) নগরের খাল খননসহ জলাবদ্ধতা নিরসনে পৃথক একটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে। অভিন্ন বিষয়ে ভিন্ন দুই সংস্থার পৃথক দুটি প্রকল্প নেওয়ায় ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ আছে, দীর্ঘদিন ধরে নগরের খালগুলো সংস্কার করে আসছে চসিক। কিন্তু এ বছর খাল খননে চউক প্রকল্প গ্রহণ করে। ফলে খননকাজ বাস্তবায়ন জটিলতার মুখে পড়েছে। এমতাবস্থায় জলাবদ্ধতা নিরসনের মৌলিক এই কাজ কতটুকু বাস্তবায়ন হবে কিংবা হবে কিনা- এসব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তা ছাড়া দুই সংস্থা সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করলে নগরবাসীকেই এর চরম খেসারত দিতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ৭ জানুয়ারি নগরীর ৫৭ খালকে ছয় জোনে ভাগ করে খননকাজ শুরু করে চসিক। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দুই কোটি টাকা ব্যয়ে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়। প্রকল্পের আওতায় ছয়টি জোনের ১৪৩ দশমিক ২০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৫৭টি খাল থেকে মোট এক লাখ ২৬ হাজার ৯৩ ঘন মিটার মাটি উত্তোলন করার কথা। অন্যদিকে চউক ‘চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে। ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির জন্য ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়। গত ৬ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় জরুরি ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় চউককে। জলাবদ্ধতা নিরসন নিয়ে এমন ধূম্রজাল পরিস্থিতিতে চসিক গত রবিবার চউক চেয়ারম্যান বরাবর ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অর্থায়নে জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল খনন চালু রাখার বিষয়ে মতামত প্রদান’ শীর্ষক চিঠি দেয়। চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সামসুদ্দোহা স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়— ‘চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে ৩৬টি খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পটি একনেক সভায় সিডিএর অনুকূলে অনুমোদন করা হয়েছে মর্মে সিটি করপোরেশনকে অবহিত করা হয়। প্রতি বছর জলাবদ্ধতার দরুন জনদুর্ভোগ লাঘবের নিমিত্তে সিটি করপোরেশন নিয়মিতভাবে নগরের খালগুলো খননকাজ করে আসছে। আগামী বর্ষায় জলাবদ্ধতা সমস্যা লাঘবে সিটি করপোরেশন ইতিমধ্যে বিভিন্ন খাল খননের প্রকল্প গ্রহণ করেছে এবং কিছু কার্যক্রম চলমান রয়েছে। খালগুলো হতে মাটি উত্তোলন ও অবৈধ স্থাপনা অপসারণের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে চউকও প্রকল্প গ্রহণ করে। এ অবস্থায় চসিক খালগুলোর মাটি উত্তোলন ও খননের প্রকল্প ব্যয় চউকের প্রকল্পের আওতায় পরিশোধ করা হবে কিনা, অথবা প্রকল্প ডুপ্লিকেশনের সম্ভাবনা থাকায় চসিকের খাল খননের চলমান কার্যক্রম বন্ধ করা হবে কিনা— এ বিষয়ে সুস্পষ্ট মতামত দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।’  চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সামসুদ্দোহা বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে চউকের মেগা প্রকল্পে খাল খননের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত।

ফলে চসিকের খাল খনন অব্যাহত রাখলে দ্বৈততা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ কারণে আমরা চউক চেয়ারম্যান বরাবর বিষয়টি সমাধানের জন্য চিঠি পাঠিয়েছি। চিঠির উত্তরের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।’

তিনি বলেন, ‘প্রতি বছরই ধারাবাহিকভাবে বর্ষার আগে চসিক নগরের খাল সংস্কার করে। এ বছরও গত জানুয়ারি থেকে নগরকে ছয়টি জোনে ভাগ করে ৫৭টি খাল সংস্কারের কাজ শুরু করেছে। ফলে বিষয়টি নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সমাধান হওয়া জরুরি।’

চউক সচিব তাহেরা ফেরদৌস বলেন, ‘চিঠির বিষয়ে আমি কিছু জানি না। চেয়ারম্যান ছুটিতে আছেন। তিনি এলে এ ব্যাপারে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’             

চউকের মেগা প্রকল্পের মধ্যে আছে— ১ হাজার ৭২৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০৭ দশমিক ৭ একর জমি অধিগ্রহণ, ৩১৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় ৮৫ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার নতুন রাস্তা নির্মাণ, ২৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকায় মাটি খনন এবং ২৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকায় ৩৬টি খালের মাটি অপসারণ, ২ হাজার ৬৪০ কোটি টাকায় ১৭৬ কিলোমিটার আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, ২৯৬ কোটি ১৬ লাখ টাকায় ৪৮টি পিসি গার্ডার ব্রিজ প্রতিস্থাপন, ৪৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকায় বন্যার পানি সংরক্ষণে ৩টি জলাধার স্থাপন, ৭ কোটি ২০ লাখ টাকায় ৬টি আরসিসি কালভার্ট প্রতিস্থাপন, ৮৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকায় ৫টি টাইডাল রেগুলেটর নির্মাণ, ৩২ কোটি ৬ লাখ টাকায় ১২টি পাম্পস স্থাপন, ২৯ কোটি ৪০ লাখ টাকায় ৪২টি সিল্টট্র্যাপ স্থাপন, ১৭ কোটি ২২ লাখ টাকায় ১০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার নতুন সাইড ড্রেন নির্মাণ ও ৯ কোটি ৪০ লাখ টাকয় ২০০টি ক্রসড্রেন কালভার্ট নির্মাণ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর