বুধবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ চায় ডিসিসিআই

করপোরেট কর ৫ শতাংশ কমানোসহ ২১ দফা সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে দেশের প্রাচীন বাণিজ্য সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। সংগঠনটি সব ক্ষেত্রে করপোরেট কর ৫ শতাংশ কমানোর সুপারিশ করেছে। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচার রাজস্ব ভবনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে এ প্রস্তাব দেয় ডিসিসিআই। এতে বক্তব্য দেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, শুল্কনীতির সদস্য ফিরোজ শাহ আলম, ভ্যাটনীতির সদস্য রেজাউল হাসান ও করনীতির সদস্য কানন কুমার রায়, ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাসেম খানসহ সংগঠনটির নেতা ও চেম্বারের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা। ডিসিসিআই উত্থাপিত প্রস্তাব শুনে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রতি বছরই বাজেটের আকার বাড়ে। এবারও বাড়বে। বর্তমানে প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ আছে। এটাকে আরও বাড়ানোর চেষ্টা করব। যদিও এ বছরই প্রবৃদ্ধির হার ৮-এ নিয়ে যেতে পারব না।’ তিনি বলেন, ‘দেশের উন্নয়ন বিবেচনা করে আমাদের যে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা, তা খুব কমিয়ে আনা যাবে না। বরং রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ বাড়বে। কর কমিয়ে কীভাবে রাজস্ব বাড়ানো যায়, এদিকটায় আমরা যেতে চাই। কারণ কোনো কোনো ক্ষেত্রে ট্যাক্স কমানোর ফলে রাজস্ব বেড়েছে।’ অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়লে রাজস্ব বাড়বে বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকার লক্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে এবং এ বছরের মধ্যে এলএনজি সরবরাহ নিশ্চিত করা হলে শিল্পকারখানায় চাহিদামাফিক গ্যাস সংযোগ প্রদান সম্ভব হবে।

ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাশেম খান তার প্রস্তাবে বলেন, ‘ট্যাক্স কমিয়ে দিলে সেই টাকা দিয়ে আমরা বাড়ি-গাড়ি করব না। আপনারা যদি ট্যাক্স কমিয়ে দেন, ভবিষ্যতে সেই টাকা বিনিয়োগ করতে চাই। অনেক ক্ষেত্রে দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। বিনিয়োগের সুযোগ করে দিলে সেই টাকা হয়তো দেশেই থেকে যেত।’

তিনি বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সর্বোচ্চ সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করতে হবে। ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপের প্রস্তাব করেন তিনি। এ ছাড়া ব্যক্তিগত আয় ৭ লাখ টাকা হলে ১০ শতাংশ, ৯ লাখ টাকা হলে ১৫ শতাংশ ও ১১ লাখ টাকা হলে ২০ শতাংশ হারে ধার্য করার কথা বলেন ডিসিসিআই সভাপতি। এ ছাড়া নিট সম্পদের মূল্য ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত শূন্য হারে সারচার্জ আরোপের পাশাপাশি ১৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ হারে সারচার্জ নির্ধারণের প্রস্তাব করেন তিনি।

ব্যক্তিপর্যায়ে করদাতাদের শিক্ষাভাতা করমুক্ত রাখার দাবি করে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘বিশ্বের প্রায় সব দেশেই ছেলেমেয়েদের শিক্ষাব্যয়ের ক্ষেত্রে করদাতাদের কর মওকুফের নিয়ম রয়েছে। আমাদের দেশে এ সুযোগ নেই। ফলে শিক্ষাব্যয় নির্বাহের জন্য বার্ষিক শিক্ষাব্যয় বাবদ মোট আয় থেকে এক লাখ ২০ হাজার কর অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব করছি। এ ছাড়া বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী বিদেশে অবস্থানরত সব দক্ষ পেশাজীবীকে দেশে ফিরে আসার আগ্রহ সৃষ্টি করতে বাংলাদেশে তার আয়ের প্রথম পাঁচ বছরের আয় করমুক্ত করার প্রস্তাব করছি। স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবসহ সব মোবাইল ফোন ক্রয় বাবদ সর্বাধিক ২৫ হাজার টাকা করমুক্ত বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করার প্রস্তাব করছি।’

বৈঠকে করপোরেট কর পরিশোধের পর নিট মুনাফা লভ্যাংশ আকারে বিতরণের ওপর আরোপিত বিভিন্ন স্তরের কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ডিসিসিআই। একই সঙ্গে সম্পদের সারচার্জ কমিয়ে নিয়ে আসাসহ আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক-সংক্রান্ত বিষয়ে ২১টি প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি। এর মধ্যে আয়কর সংক্রান্ত ৯টি, ভ্যাট বা মূসক-সংক্রান্ত ১টি, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি-সংক্রান্ত ২টি, আইনের বৈপরীত্য হ্রাসকরণ-সংক্রান্ত ২টি, আইনের প্রয়োগ স্বচ্ছতা-সংক্রান্ত ৭টি ও বিনিয়োগ কার্যক্রমকে অধিকতর উৎসাহ-সংক্রান্ত ১টি প্রস্তাব দেয় ডিসিসিআই।

বৈঠকে ডিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে সব স্তরের করপোরেট করের হার আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ৫ শতাংশ কমানোর কথা বলেন সভাপতি আবুল কাশেম খান। পাশাপাশি পরবর্তী দুই অর্থবছর, বিশেষ করে ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ সালের জন্য যথাক্রমে ৭ ও ১০ শতাংশ হারে কমানোর প্রস্তাব করেছেন তিনি। এ ছাড়া আগামী তিন বছরের জন্য সারচার্জ শূন্যে নামিয়ে আনারও জোর দাবি জানান ডিসিসিআই সভাপতি।

সর্বশেষ খবর