বুধবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

জন্মদিনে সংবর্ধিত সন্‌জীদা খাতুন

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

৮৫তম জন্মদিনে সংবর্ধিত হলেন সংস্কৃতিসাধক ও ছায়ানট সভাপতি সন্জীদা খাতুন। পাপিয়া সারোয়ারের কণ্ঠে দাও হে হৃদয় ভরে গানের মধ্য দিয়ে গতকাল বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এই আয়োজনের সূচনা ঘটে।

অনুষ্ঠানে সন্জীদা খাতুনের উদ্দেশে শংসাবচন পাঠ করেন ইমেরিটাস প্রফেসর আনিসুজ্জামান।

রবীন্দ্রনাথের কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। সন্জীদা খাতুনকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে উপহারসামগ্রী তুলে দেন সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবং একাডেমির বই উপহার দেন মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। একাডেমির পক্ষ থেকে সংবর্ধিতজন সন্জীদা খাতুনকে পঁচাশিটি গোলাপের গুচ্ছ তুলে দেওয়া হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী অদিতি মহসিন এবং লাইসা আহমেদ লিসা। শুভেচ্ছা বক্তৃতা দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, সৈয়দ হাসান ইমাম, শামসুজ্জামান খান, রামেন্দু মজুমদার, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, গোলাম কুদ্দুছ, বেগম আকতার কামাল, মফিদুল হক এবং সন্জীদা খাতুনের পরিবারের পক্ষে দৌহিত্রী সায়ন্তনী ত্বিষা। বক্তারা বলেন, সন্জীদা খাতুন সংস্কৃতির জন্য লড়াই করেছেন।

 তিনি শিক্ষার্থীদের কাছে একজন প্রিয় শিক্ষক, সাহিত্যজগতের একজন গুণী গবেষক ও সংস্কৃতির মাঠে লড়াকু যোদ্ধা। পাকিস্তানিদের খড়গের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে রবীন্দ  জন্মশতবর্ষ পালন থেকে শুরু করে বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে রমনার বটমূলে ছায়ানটের বাংলা নববর্ষ উৎসব উদযাপন তার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি। তিনি রবীন্দ্রসাহিত্য ও সংগীতের নিপুণ ব্যাখ্যাতা; আবার একই সঙ্গে নজরুল, জসীমউদ্দীনসহ সমকালীন সাহিত্যেরও বিশ্লেষক।

তারা বলেন, সংস্কৃতিজগতে থেকেও প্রগতিশীল রাজনীতির নেপথ্যে প্রেরণাদাত্রী হিসেবে কাজ করেছেন সন্জীদা খাতুন। আমাদের পরম সৌভাগ্য এই অনন্যসাধারণ সংস্কৃতিসাধকের কৃতীর ছায়ায় আমরা ঋদ্ধ হয়ে চলেছি। কর্মমুখর জীবনের পঁচাশি বছর পূর্তিতে বাংলা একাডেমির নেতৃত্বে নাগরিক সমাজের এই সংবর্ধনা তার প্রতি গোটা জাতির ঋণ স্বীকার মাত্র।

সংবর্ধনার উত্তরে সন্জীদা খাতুন বলেন, আজ যেভাবে আমাকে ভালোবাসা জানানো হলো তাতে আমি অভিভূত। জীবন চলার পথে আমি দ্বন্দ্ব ও ছন্দ উভয়কে স্বীকার করে নিয়েছি। সন্জীদা খাতুন শ্রোতাদের উদ্দেশে স্বকণ্ঠে না বাঁচাবে আমায় যদি গানটি পরিবেশন করেন।

সন্জীদা খাতুনকে ফুল, বই ও নানা উপহারসামগ্রী দিয়ে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি, সচিব মোহাম্মদ নাছিরউদ্দিন, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা অসীম কুমার উকিল এবং সুজিত রায় নন্দী, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ, ড. ভীষ্মদেব চৌধুরীর নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগ, পিএসসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি মানজার চৌধুরী সুইট, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, কথাসাহিত্যিক আনোয়ার সৈয়দ হক, বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর সভাপতি ড. মুনতাসীর মামুন, ড. নূহ-উল আলম লেনিন, কবি রুবী রহমান, সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাতের নেতৃত্বে জাতীয় কবিতা পরিষদ, সভাপতি আয়শা খানমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, ইন্দ মোহন রাজবংশীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ লোকসংগীত পরিষদ, রবীন্দ  একাডেমীর পক্ষে বুলবুল মহলানবিশ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর, সপ্তাহের সাতদিন পত্রিকা, মহাদেব ঘোষের নেতৃত্বে রবিরশ্মি, সুজন বড়ুয়ার নেতৃত্বে শিশু একাডেমির খুদে শিশুরা, সাংস্কৃতিক মঞ্চ, সভাপতি ফরিদ আহমেদ এবং নির্বাহী পরিচালক মনিরুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি, অনুপম প্রকাশনীর পক্ষে মিলন নাথ, নবযুগ প্রকাশনীর পক্ষে অশোক রায় নন্দীসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

সভাপতির বক্তব্যে আনিসুজ্জামান বলেন, বাঙালি সংস্কৃতিচর্চা সন্জীদা খাতুনের সত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি একাধারে সংগীতশিল্পী, সংগীত-শিক্ষক, কবিতা ও গানের ব্যাখ্যাতা ও বিশ্লেষক, তুলনাহীন সংগঠক। নিজ নীতি ও আদর্শে অবিচল থেকে তিনি সংস্কৃতিসাধনার অবিস্মরণীয় লড়াই করে গেছেন।

সংর্বধনা উপলক্ষে বাংলা একাডেমি সংস্কৃতিসাধক সন্জীদা খাতুন শীর্ষক একটি স্মারকপত্র প্রকাশ করে।

সর্বশেষ খবর