বৃহস্পতিবার, ১৭ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ শুধুই ‘আনুষ্ঠানিকতা’

বাড়ছে সব পণ্যের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

রমজান মাসে দ্রব্যমূল্যের ঘোড়দৌড় নিয়ন্ত্রণে রাখতে দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো সভা, সেমিনার, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়সহ নানা অনুষ্ঠান পালন করে। কিন্তু বাস্তবে বাজারে এর কোনো প্রভাবই প্রায় পড়ে না বলা যায়। বাজারে যথারীতি সক্রিয় থাকে অসাধু সিন্ডিকেট চক্র। বাড়তেই থাকে নিত্য ভোগ্যপণ্যের দাম। আর এমনটাই মনে করছেন সাধারণ মানুষ। গত সপ্তাহে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পিয়াজ ২২ থেকে ২৫ টাকা বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। প্রতি কেজি আলু ১৬ থেকে ১৮ টাকা বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ২৮ টাকা। এভাবে রমজানকে সামনে রেখে নিত্য ভোগ্যপণের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। ক্রেতাদের অভিযোগ, সংস্থাগুলোর সব আয়োজন-কর্মসূচি অনুষ্ঠাননির্ভর। বাজারের বাস্তবতার সঙ্গে এর দূরত্ব অনেক। ব্যবসা ও বাজার নিয়ন্ত্রকদের ধরাছোঁয়ার বাইরে রেখেই হয় যত সব আনুষ্ঠানিকতা। ফলে বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়ে না। জানা যায়, রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি গতকাল ‘পবিত্র রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্য, যানজট ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। গত ৬ মে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ‘বাজার মূল্য পর্যবেক্ষণ, মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণবিষয়ক কমিটি’। সার্কিট হাউসে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনও।

কিন্তু বাজারে এর প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।  

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, ‘জেলা প্রশাসন সারা বছরই বাজার তদারকি করে থাকে। কিন্তু রমজানের সময় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে। ইতিমধ্যে নগরের বাজারগুলোতে প্রশাসনের পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ  আদালত টিম অভিযান পরিচালনা করছে। ইতিমধ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা একাধিক অভিযানও পরিচালনা করেছেন। নিত্য ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’  

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য হলো সারা বছরই বাজার তদারকি করতে হবে। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসনের বাজার মনিটরিংও অব্যাহত রাখতে হবে। তা না হলে বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হবে নাা।’

পণ্যের কৃত্রিম সংকট নিরসনে নানা উদ্যোগ : পণ্যের কৃত্রিম সংকট নিরসনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে রমজান মাসে ওজনের বাধা শিথিল হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের ৯২ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে। তাই সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট সচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে। দুই-তিন দিনের মধ্যে রমজানের জন্য মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়ির ওজন নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা হবে। আর এটা হলে দেশের কোনো অঞ্চলে পণ্যের কৃত্রিম সংকট হবে না। গতকাল দুপুরে নগরীর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্য, যানজট ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা করেন। সিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, কৃত্রিম সংকট যাতে না হয় সেদিকে ব্যবসায়ী নেতাদের নজর রাখতে হবে। এতে সরকার ও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। বিশ্বের সব দেশে উৎসবে ছাড় দেওয়া হয়। সিসিসিআই ভর্তুকি মূল্যে চাল, চিনি বিক্রি করে রমজানে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পায়।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মাসুদ-উল-হাসান বলেন, ঈদ মৌসুমে শোরুম ও বিপণি কেন্দ্রে গ্রাহকের কাছে বিক্রীত পণ্য প্রয়োজনে ফেরত নিতে হবে। অনেক বড় শোরুমে ফেরতের আলাদা কাউন্টার থাকে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে।

সর্বশেষ খবর