শনিবার, ২ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

ছুটির দিনে জমজমাট ঈদবাজার

বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে স্বস্তি ক্রেতাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছুটির দিনে জমজমাট ঈদবাজার

অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী এরই মধ্যে পেয়েছেন মে মাসের বেতন। আবার বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছেও চলে গেছে ঈদের বোনাস। তাই গতকাল ছুটির দিনে এবং মাসের প্রথম দিনে জমে উঠেছে ঈদের বাজার। দুপুরের দিকে হালকা বৃষ্টিতে ক্রেতাদের কিছুটা সমস্যা হলেও ভ্যাপসা গরমের জন্য অনেকে আবার বৃষ্টিপাতের পরও স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। ঢাকার কয়েকটি শপিং মলের বিক্রেতারা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, রোজায় প্রথম দিকে শপিং মল ও বিপণিবিতানগুলোয় কমবেশি ঈদের বেচাকেনা হলেও মূল বেচাকেনা শুরু হয়েছে আজ (গতকাল)। এমনকি আজই বিপণিবিতানগুলোয় বিক্রেতাদের কাঙ্ক্ষিত ক্রেতাসমাগম শুরু হয়েছে। ফলে অবশেষে বিক্রেতাদের মুখে হাসি ফুটতে শুরু করেছে। আর ছুটির দিন হওয়ায় পরিবার-পরিজন ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে ক্রেতারাও সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন শপিং মল, বিপণিবিতানে ভিড় জমান। বিশেষ করে ঈদ করতে যারা নাড়ির টানে বাড়ি যাবেন তাদের উল্লেখযোগ্য অংশই এদিন ঈদের কেনাকাটা শুরু করেন।

রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং মল গতকাল ক্রেতার উপস্থিতিতে সরগরম ছিল। বিক্রেতারা জানান, ছুটির দিন হওয়ায় সকালেই ক্রেতার আনাগোনা শুরু হয়। তারা আরও জানান, রমজানের মাঝামাঝিই সাধারণত মানুষ ঈদের কেনাকাটা করতে শুরু করেন। সে হিসেবে গতকাল ক্রেতার উপস্থিতি ও বেচাকেনায় এই শপিং মলের বিক্রেতারা সন্তোষ প্রকাশ করেন। বসুন্ধরা শপিং মলে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে পাঞ্জাবি কিনতে এসেছিলেন সরকারি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, একাধিক বিপণিবিতানের যাওয়ার ঝামেলা এড়াতে বরাবরই এখানে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদের কেনাকাটা সারেন।

ক্রেতার সরব উপস্থিতি চোখে পড়ে রাজধানীর ধানমন্ডি রাপা প্লাজা, মেট্রো শপিং মল, জেনেটিক প্লাজা, আনাম র্যাংগস প্লাজা, ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকান লা রিভ, বিবি ফ্যাশন হাউস, টেক্সমার্টসহ অন্যান্য দোকানেও। জেনেটিক প্লাজায় দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে আসা এক বেসরকারি কর্মকর্তা রফিকুল হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এতদিন বেতন-বোনাসের অপেক্ষায় ছিলাম। তা হাতে আসায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে শপিংয়ে এসেছি। যেহেতু ঈদের ছুটিতে পুরো পরিবার নিয়ে বাড়ি যাব এজন্য কেনাকাটা সেরে ফেলছি।’

মিরপুর-২ নম্বর এলাকার মিরপুর বুটিকপাড়া, দেশি ফ্যাশন হাউস আড়ং, কে-ক্রাফট, বাংলার মেলা, সেইলর, টুয়েলভ ও ইনফিনিটিতে ছিল চোখে পড়ার মতো ক্রেতার উপস্থিতি। এর মধ্যে ছোট সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে আসা অভিভাবক ও তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতি ছিল বেশি। মিরপুরে সেইলরের নতুন ব্রাঞ্চের বিক্রয়কর্মীরা জানান, রোজার শুরু থেকে তাদের ফ্যাশন হাউসে ক্রেতারা ঈদের এক্সক্লুসিভ সংগ্রহ দেখতে আসছেন। এর মধ্যে পছন্দ হলে অনেকে পোশাক কিনছেনও। তবে ঈদের আগে গতকাল ক্রেতাসমাগম ও বেচাকেনা ছিল সবচেয়ে বেশি।

অন্যদিকে আসাদ গেটের দেশি ফ্যাশন হাউস আড়ংয়ে ক্রেতার মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতির জন্য গতকাল অনেকটা গা-ঘেঁষাঘেঁষি করেই পোশাক দেখতে হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নওরিন জাহান বলেন, ‘আর কদিন পরই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের ছুটি শুরু হচ্ছে। ২২ রোজার পর গ্রামের বাড়ি ভোলায় যাব। বাড়ি থেকে ঈদের কেনাকাটার জন্য বাবা টাকা পাঠিয়েছেন। এজন্য বন্ধুদের নিয়ে আড়ংয়ে ঈদের কেনাকাটা সারতে এসেছি।’

নিউমার্কেট, গাউছিয়া ও চাঁদনীচক এলাকাতেও এদিন ক্রেতার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। গাউছিয়ার টেইলার্সের দোকানগুলোয় গিয়ে দেখা যায় দর্জি মাস্টার ও তার কর্মীদের যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। সেখানকার এক দর্জি মাস্টার মো. রানা বলেন, ‘আমরা বিশেষ অর্ডার ছাড়া আর কোনো অর্ডার নিচ্ছি না। চাঁদরাতের আগে কাজ শেষ করতে রাতদিন কাজ করছি।’ অন্যদিকে চাঁদনীচকের গজ কাপড়ের দোকানে রোজার শুরুতে বেচাকেনা বেশি থাকলেও এখনো ভালো পরিমাণে গজ কাপড় বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে যারা আত্মীয়দের থ্রি-পিস কাপড় উপহার দেবেন এবং নিজেরাই ঘরে ঈদের জামা তৈরি করবেন, তারা এখন চাঁদনীচকের গজ কাপড়ের দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন। এর বাইরে এলিফ্যান্ট রোডের জুতার দোকানগুলোর মধ্যে বাটা, ক্রিসেন্ট, এপেক্স, লোটোসহ অন্যান্য দোকানেও গতকাল ক্রেতাদের জুতার দরদাম করতে দেখা যায়। জুতার দোকানিরা জানান, ঈদের ১০-১৫ দিন আগে থেকেই তাদের বেচাকেনা জমে ওঠে, যা চাঁদরাত পর্যন্ত চলে।

সর্বশেষ খবর