শনিবার, ৩০ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
সিটি নির্বাচন

সেলিমের মান ভাঙার অপেক্ষায় আরিফ, মাঠে কামরান

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সেলিমের মান ভাঙার অপেক্ষায় আরিফ, মাঠে কামরান

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে বিএনপির ‘ঝামেলা’ যেন ফুরোচ্ছেই না। প্রথমে দলীয় মেয়র প্রার্থী কে হবেন, তা নিয়ে চলে নানা নাটকীয়তা। এরপর একেবারে শেষ সময় কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও সদ্য সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকেই দলীয় মনোনয়ন দেয়। কিন্তু এ সিদ্ধান্তে বেঁকে বসেছেন সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম। দলীয় সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জমা দিয়েছেন মনোনয়নপত্র। এরকম অবস্থায় দলীয় প্রার্থী আরিফ আছেন শঙ্কায়। তবে তার আশা, শেষ পর্যন্ত মান ভাঙবে সেলিমের, সরে দাঁড়াবেন নির্বাচন থেকে। এদিকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান অনানুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণায় আছেন মাঠে। তিনি কুশল বিনিময়ের আড়ালে এগিয়ে রাখছেন নির্বাচনী প্রচারণা। সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এবার বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ছয় নেতা। এসব নেতার কেউই নির্দিষ্ট কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে না দাঁড়ানোয় তাদের ডেকে নেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। ঢাকায় এসব নেতা দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দেন; পরে তাদের সাক্ষাৎকার নেয় বিএনপির মনোনয়ন বোর্ড। কিন্তু এরপরও কাকে মনোনয়ন  দেওয়া হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারছিল না দলটি। এরমধ্যে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে, সিসিক নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে লন্ডন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গুঞ্জন আর নানা কানাঘুষার মধ্যে পেরিয়ে যেতে থাকে সময়। অবশেষে মনোনয়নপত্র  জমাদানের সময় শেষ হওয়ার আগের দিন গত বুধবার সিলেট বিএনপির এক ডজন নেতাকে ঢাকায় তলব করা হয়। এসব নেতাকে নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে সেদিন বিকালে আরিফুল হক চৌধুরীকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয়। মনোনয়নপ্রত্যাশী অপর চার নেতা এ সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও ক্ষুব্ধ হন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম। বৃহস্পতিবার দলীয় প্রার্থী আরিফ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর সেলিমও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। বদরুজ্জামান সেলিম মনোনয়নপত্র জমা দিলেও সিসিকের সদ্য সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আশার ভেলায় চড়ছেন। তিনি মনে করছেন, অভিমান থেকে সেলিম মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন। তবে সেলিমের কথায় আরিফের জন্য কোনো আশার আলো নেই। নির্বাচন করতে এখনো পর্যন্ত অনড় সেলিম। অবশ্য সেলিমের জন্য বসে নেই আরিফ। তিনি নগরবাসীর সঙ্গে কুশল বিনিময় চালিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল নগরীর বন্দরবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও ধানের শীষের পক্ষে সহযোগিতা চান তিনি। পরে লালদীঘিরপাড় মহাজনপট্টি এলাকায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন আরিফ। নিজের প্রার্থিতার বিষয়ে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘প্রায় চার দশক ধরে বিএনপির সঙ্গে আমি জড়িত। এক বছর আগে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থিতা ঘোষণা করি। তারেক রহমানের অনুমতি নিয়ে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করি। আমরা যারা মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলাম, তাদের সাক্ষাৎকার নেয় দলের মনোনয়ন বোর্ড। সেখানে আমাদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আপনাকে মনোনয়ন না দিলে আপনি কাকে সমর্থন দেবেন। তখন আরিফসহ সবাই আমার কথা বলেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে আরিফকে প্রার্থী করায় আমি হতাশ, হতবাক। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের চাপে আমি প্রার্থী হয়েছি।’ আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘বদরুজ্জামান সেলিম দলের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ নেতা। দলের জন্য তার অনেক অবদান ও ত্যাগ আছে। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তিনি অভিমান থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তবে আমি বিশ্বাস করি, শেষ পর্যন্ত দলের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে সেলিম মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে আমার পক্ষে কাজ করবেন।’ এদিকে সাবেক সিটি মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান গত ২২ জুন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পান। পরদিন সিলেটে ফেরার পর থেকেই অনানুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় আছেন তিনি। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন তিনি। তবে কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি নির্বাচনে সবার দোয়া ও সহযোগিতা চাইছেন কামরান। গতকাল নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ডে টিলাগড় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় শেষে মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে নৌকার পক্ষে ভোট চান কামরান। এ ছাড়া নগরীর কুয়ারপাড় এলাকায়ও গণসংযোগ করেন তিনি। এ বিষয়ে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, ‘আমি নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছি না। অতীতের মতো আমি নগরীর মানুষের সুখ-দুঃখের খবর নিতে বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছি। এ সময় মানুষের ভিড় জমছে। কথা প্রসঙ্গে নির্বাচনের বিষয়টি চলে আসে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর