শনিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

গুপ্তধনের খবর নেই মিরপুরের সেই বাড়িতে

মাহবুব মমতাজী

গুপ্তধনের খবর গুজব না সত্য তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঝুলে আছে এখনো। খননের ২০ দিন পার হলেও এখনো শুরু হয়নি মাটি পরীক্ষার কাজ। তবে কবে সেই সিদ্ধান্ত মিলবে তা কেউই জানে না। অনেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন গুপ্তধনের খবরের। দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলছেন, প্রশাসনিক নানা ঝামেলার কারণে বাড়িটিতে গুপ্তধন আছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হয়নি। আগামী রবিবার অথবা শনিবার সেখানে আরেকটি অভিযান শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে।   

প্রায় মাসখানেক আগের খবর ‘রাজধানীতে গুপ্তধন’। এরপর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এ খবর। দেশবাসীর আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে এটি। হঠাৎ গুঞ্জন, গুঞ্জনের পর অমূল্য সম্পদ উদ্ধারে মোতায়েন পুলিশ ও কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কয়েকদিন পর শুরু হয় মাটি খোঁড়াখুঁড়ির কাজ— এ সবকিছুই এখন রাজধানীতে হাস্যরসের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এলাকাবাসীর মধ্যেও দানা বেঁধেছে নানা সন্দেহ-সংশয়ের। পুলিশ জানায়, রাজধানীর মিরপুরের একটি বাড়ির মেঝেতে গুপ্তধন আছে— এমন সংবাদ দিয়ে গত ১০ জুলাই মিরপুর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাসিন্দা তৈয়ব। পরদিনই ওই এলাকায় গুপ্তধনের গুঞ্জন শুরু হয়। আর তখনই সেখানে বাড়ানো হয় পুলিশি পাহারা। গুপ্তধনের বাড়িটি এক পলক দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মানুষেরও ভিড় জমতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা ও গুপ্তধন উদ্ধারের জন্য গত ১৪ জুলাই একই থানায় আরেকটি জিডি করেন বাড়িটির বর্তমান মালিক মনিরুল ইসলাম। দুই জিডির প্রেক্ষিতে গত ২১ জুলাই মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের সি ব্লকের ১৬ নম্বর সড়কের ১৬ নম্বর বাড়িটির একটি ঘরের চার ফুট খনন করা হয়। এদিন সেখানে গুপ্তধন উদ্ধার না হওয়ায় পরদিন ফের খননের সিদ্ধান্ত হলেও পরে তা স্থগিত করা হয়। জানানো হয়, মাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গুপ্তধনের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে খনন করা হবে। গতকাল ওই বাড়িতে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটি সুনসান নীরব। প্রধান ফটকের পাশে এখনো খনন করা মাটির স্তূপ। ভিতরে একটি ঘরে দুজন পুলিশ পাহারায় আছেন। আরেকটি ঘরে বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক শফিকুল ইসলাম ও সুমন থাকেন। পুলিশের ব্যবহৃত ঘরটিতে এরই মধ্যে ফেলানো হয়েছে একটি বিছানা। অনেকটা শুয়ে-বসে পালাক্রমে সেখানে পাহারা দিচ্ছেন পুলিশের ৬ জন সদস্য। প্রদীপ নামের একজন জানালেন- মাটি পরীক্ষার কোনো কিছুর বিষয়ে তারা জানেন না। আর কবে করা হবে সেই কাজ সে সম্পর্কেও তাদের কোনো ধারণা নেই। খনন অভিযানের দায়িত্বে থাকা ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ এ প্রতিবেদককে জানান, আমরা আগামী রবিবার অথবা সোমবার ভূ-তত্ত্ব অধিদফতরের লোকজন সেই বাড়িতে যাব। এরপর জিপিআর রাডার দিয়ে গুপ্তধনের অনুসন্ধান করা হবে। কেননা বাড়িটি যে অবস্থায় রয়েছে তাতে সেখানে পুনরায় খনন করা সম্ভব নয়। বরং যেটুকু খনন করা হয়েছে তা বন্ধ করে প্রযুক্তিগত অনুসন্ধান চালানো হবে। মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দাদন ফকির জানান, জেলা প্রশাসনের লোক না থাকায় এতদিন সেই বাড়ি নিয়ে কোনো কাজ করা হয়নি। তবে বাড়িটিতে গুপ্তধন থাকা না থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন জেলা প্রশাসনই।  ওই বাড়ির বিপরীতে একটি ভবনের ভাড়াটিয়া সাকিব বলেন, কয়েকদিন গুপ্তধন নিয়ে এ এলাকায় যা শুরু হয়েছিল, তা নিয়ে এখন আমরা নিজেরাই হাসাহাসি করি। সবাই মনে করছে গুপ্তধন গুঞ্জন নিছকই একটি গুজব। জানা যায়, বাড়িটির মূল মালিক বিমানের সাবেক কর্মকর্তা দিলশান খান। তিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তান চলে যান। ২০১০ সালে সেই বাড়িটি মনিরুল ইসলাম কিনে নেন।

সর্বশেষ খবর