বুধবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
রিজার্ভ চুরি

ডিসেম্বরের আগেই মামলার প্রস্তুতি সম্পন্নের নির্দেশ

মানিক মুনতাসির

নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় সে দেশের আদালতে মামলা রুজু করা সংক্রান্ত সব ধরনের প্রস্তুতি ডিসেম্বরের আগেই সম্পন্ন করার নির্দেশনা দিয়েছে অর্থবিভাগ। কারণ আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির পর মামলা করার কোনো আইনি বৈধতা থাকবে না বাংলাদেশ ব্যাংকের। এ ছাড়া সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ফলে নির্বাচনের আগেই মামলার প্রস্তুতি শেষ করে ফাইল জমা দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। অর্থবিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে, এ ঘটনায় দায়ী প্রতিষ্ঠান রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) জুপিটার শাখার তৎকালীন ব্যবস্থাপক মায়া শান্তোস দেগুইতো জেল ও অর্থদণ্ডসহ উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। তার বিরুদ্ধে চলমান মামলার রায় ঘোষণা হবে খুব শিগগিরই। কেননা রিজার্ভ চুরি সংঘটনের সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের চূড়ান্ত কনফারমেশন ছাড়াই তিনি অর্থ ছাড় করেছেন বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের পক্ষ থেকে করা তদন্তের একটি প্রতিবেদন ফিলিপাইনের আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। সেখানেও ফিলিপাইনের আরসিবিসির কর্মকর্তাদেরই দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। মানি লন্ডারিং কিংবা সে দেশের ব্যাংকিং আইন ভঙ্গের অপরাধে শাস্তি পেতে যাচ্ছেন মায়া। এমনকি নিউইয়র্কের কোর্টে বাংলাদেশ মামলা করার আগেই মায়ার বিরুদ্ধে চলমান মামলার রায় ঘোষণা হতে পারে। ফিলিপাইনের ম্যানিলার বাংলাদেশ দূতাবাস, বাংলাদেশের পুলিশ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগের পরামর্শক দেবপ্রসাদ দেবনাথ বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করবে বাংলাদেশ।

বিলম্বে হলেও চুরির অর্থের পুরোটাই ফেরত আনা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি বলেছিলেন, আইন মোতাবেক এমন ঘটনায় মামলা করতে সর্বোচ্চ তিন বছর সময় পাওয়া যায়। সে হিসেবে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে আদালতে যেতে হবে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাইবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি হয়। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ওই বছরের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা। ওই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় আগামী ২ অক্টোবর। নির্দিষ্ট সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সূত্র জানায়, ৫ জুলাই ম্যানিলার আদালতে বাংলাদেশ সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। সেখানে সিআইডির দুই কর্মকর্তা প্রতিবেদনটি জমা দেন। পাশাপাশি তারা মৌখিক বক্তব্য দিয়েছেন আদালতে। কর্মকর্তা দুজন হলেন সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান ও ফাহিম হোসেন। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। পাঁচটি সুইফট বার্তার মাধ্যমে চুরি হওয়া এ অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া ২ কোটি ডলার ইতিমধ্যে ফেরত এসেছে। তবে ফিলিপাইনে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে এখনো ফেরত আসেনি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার।

সর্বশেষ খবর