শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ৬০০ ঘর

আরও বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ৬০০ ঘর

পাহাড়ের মালিক রেলওয়ে। এর উচ্চতা ৪০ থেকে ৫০ ফুট। পাহাড়-টিলা শ্রেণির এই পাহাড় কার্যত বালুর। এমন উচ্চতার পাহাড়ের পাদদেশেই সমতল করে ‘স্থানীয় প্রভাবশালী’ মহল নির্মাণ করেছে প্রায় ৬০০টি কাঁচা-পাকা ঘর। আর এ কারণেই ভারি বর্ষণে পাহাড়-দেয়াল ধসে নারী-শিশুসহ চারজনের মৃত্যু হয়। চট্টগ্রাম নগরে পাহাড় ধসে এক রাতেই পৃথক দুই স্থানে চারজনের মৃত্যুর কারণ জানতে চেয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে রবিবারই পরিবেশ অধিদফতরের দুজন কর্মকর্তা ঘটাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের পর গতকাল পরিবেশ অধিদফতরে ‘পাহাড়ধসের ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রেরণ করে সংস্থাটির চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়। প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। চট্টগ্রাম মহানগর ও আশপাশে ২৮ অতি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বাস করছে ৬৮৪ পরিবার। পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আমাদের পর্যবেক্ষণ হলো, সেখানে বালু শ্রেণির পাহাড়ের পাদদেশে কিছু গরিব মানুষ বসবাস করত। কিন্তু ওই দিন তাদের সরে যেতে বলা হলেও তারা অন্যত্র যায়নি। তবে এখানে পাহাড় কাটা হয়নি। বিষয়টি অবহিত করে আমরা পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন দেব।’

পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার গভীর রাতে পাহাড়ধসের পর পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম মহানগর এর কারণ উদ্ঘাটনে সরেজমিন পরিদর্শনে যান পরিবেশ অধিদফতরের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা খন্দকার মো. তাহাজ্জুত আলী এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মুক্তাদির হাসান। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘স্থানটি পাহাড়-টিলা শ্রেণির বালুর পাহাড়। এর পাদদেশে সমতল করে বসবাসের জন্য কিছু কাঁচা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। পাহাড়-টিলাগুলো সমতল থেকে ৪০-৫০ ফুট উচ্চতার। এসব পাহাড়-টিলার পাদদেশ সমতল করে প্রায় ৬০০ কাঁচা-পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়। সাইক্লোন তিতলির প্রভাবে টানা কয়েক দিনের বর্ষণে পাহাড়ধস হয়।’ অভিযোগ আছে, পাহাড়ের আশপাশের স্থানীয় প্রভাবশালীরা পাহাড় কিংবা পাহাড়ের পাদদেশ কেটে, সমতল করে কাঁচা-পাকা ঘর নির্মাণ করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। এ নিয়ে প্রশাসনের কার্যকর কোনো ভূমিকা নেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হলেও কিছুদিন পর তারা আবারও ফিরে আসে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে। ফলে পাহাড় ধসে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হলেও অধরাই থেকে যান প্রভাবশালীরা। তদুপরি চট্টগ্রামের সর্বশেষ বিদায়ী জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় নিয়ে ‘চট্টগ্রাম জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাস, পাহাড় কর্তন ও করণীয় সম্পর্কে রূপরেখা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে প্রভাবশালীদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছিলেন, ‘পাহাড়ধসে ভৌগোলিক কারণ কিছুটা দায়ী হলেও এর চেয়ে বেশি দায়ী নির্বিচারে পাহাড় কর্তন, পাহাড় ব্যবস্থাপনায় নীতিমালা না থাকা, পাহাড় নিয়ন্ত্রণে সংস্থা-প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির অনুপস্থিতি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রভাবশালী ব্যক্তি, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের দুর্বৃত্তায়ন। তবে এসব ঠেকাতে আমাদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।’ প্রসঙ্গত, আকবর শাহ থানাধীন পূর্ব ফিরোজ শাহ কলোনির এক নম্বর ঝিল এলাকার বরিশাল ঘোনায় পাহাড় ধসে একই পরিবারের তিনজন নিহত হন। এরা হলেন নূরজাহান বেগম (৪৫), তার মেয়ে নূর আয়েশা (৪) ও নূরজাহানের মা জুলেখা বেগম (৬৫)। এ ছাড়া পাঁচলাইশ থানাধীন রহমান নগর এলাকায় দেয়াল ধসে নুরুন্নবী নান্টু (৪৫) নামে একজন নিহত হন।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর