শনিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভোট কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহে মাঠে গোয়েন্দা

জানার চেষ্টা করা হচ্ছে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়

মাহবুব মমতাজী

নির্বাচনের সময় ভোট গ্রহণের দায়িত্ব পালন করতে পারেন এমন সম্ভাব্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষকদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলার নির্বাচনী অফিসের মাধ্যমে এসব তথ্য সংগ্রহের দায়িত্বে রয়েছেন পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা। এমনকি তারা শিক্ষকদের পারিবারিক রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাও জানার চেষ্টা করছেন। আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সংগ্রহ করা তথ্যের মধ্যে রয়েছে— ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক পরিচয় এবং পরিবারের সদস্যদের কেউ রাজনীতিতে জড়িত কিনা। যদিও তথ্য সংগ্রহের এই কার্যক্রম চালানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। জানা গেছে, গত আগস্ট থেকে এ পদক্ষেপ গ্রহণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে এখনো পর্যন্ত অধিকাংশ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে চলছে এই তথ্য সংগ্রহের কাজ। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহের জন্য কোনো চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও দেয়নি নির্বাচন কমিশন। তবে নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তারা বলছেন, প্রশাসন নিজেদের প্রয়োজনে এসব তথ্য নিয়ে থাকে। এজন্য কমিশন থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয় না।  সূত্র জানায়, গত জুলাইয়ে উপজেলা পর্যায়ের নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ৪৯৫টি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের কার্যক্রম এবং তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার তথ্য, বিভিন্ন কার্যকলাপ সংক্রান্ত প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। পাশাপাশি চলছে মাঠ পর্যায়ের কাজ। আর আগামী নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করতে পারেন এরকম সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষক ও এনজিও কর্মীদের তথ্য সংগ্রহ করছেন সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। নারায়ণগঞ্জ, পাবনা, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, রংপুর, শেরপুর, গাইবান্ধা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া ও সুনামগঞ্জ জেলার একাধিক শিক্ষক জানান, গত মাসে তাদের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। অতীতে তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন কিনা, এমনকি তাদের পরিবারের কোনো সদস্য রাজনীতিতে সম্পৃক্ত কিনা, সেই দলের নাম, পদসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়। অতীতে সংসদ নির্বাচনের আগে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে রদবদল হলেও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষকদের নিজেদের এবং পরিবারের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিস্তারিত তথ্য এভাবে সংগ্রহ করা হয়নি। বিশেষ করে শিক্ষকদের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটেনি বলেও জানান তারা।

গাইবান্ধা আদর্শ কলেজের শিক্ষক গৌতম আশিষ জানান, প্রায় মাস খানেক আগে স্থানীয় নির্বাচন অফিসার ও পুলিশ কর্মকর্তা এসে তাদের কলেজের সব শিক্ষক সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে গেছেন। লালমনিরহাট উত্তরণ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক আবদুস সালাম জানান, ১০-১২ দিন আগে তাদের এবং পরিবারের কেউ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কিনা। জড়িত থাকলে কোন দলের সঙ্গে জড়িত তা জেনে গেছে। রংপুরের মাহিগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জানান, তার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়েও তথ্য নিয়ে গেছে থানা পুলিশ। নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুসারে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সারা দেশে ৪০ হাজার ১৯৯টি কেন্দ্র হবে। তার মধ্যে বুথ হবে ২ লাখ ৬০ হাজার ৫৪০টি। প্রতি কেন্দ্র একজন প্রিসাইডিং অফিসার, প্রতি বুথে একজন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং দুজন পোলিং অফিসার থাকবে। সব মিলিয়ে নির্বাচনে ৮ লাখের বেশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকবেন। এর একটা বড় অংশই হচ্ছেন সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজ পর্যায়ের শিক্ষক। পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি (ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স) মনিরুজ্জামান এ প্রতিবেদককে জানান, এ ধরনের তথ্য সংগ্রহের কাজ করা হচ্ছে কিনা তা আমার জানা নেই। তবে এই তথ্য সংগ্রহে পুলিশের কোনো এখতিয়ার নেই এবং তা পুলিশের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে না। প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার বানানোর দায়িত্ব সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের। তথ্য দেওয়া শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, যেসব শিক্ষকের ব্যাপারে সন্দেহ হচ্ছে তাদের তথ্য বেশি নেওয়া হচ্ছে। তথ্য সংগ্রহের সময় সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের পারিবারিক তথ্য যেমন— পিতা-মাতা, ভাইবোন, চাচা, মামা, শ্বশুর, শাশুড়ি, শ্যালক, স্বামী,  দেবর, ননদ ও ভাসুরের তথ্য নেওয়া হয়। সবার তথ্য নেওয়ায় শিক্ষকরা এক ধরনের আতঙ্কের মধ্যে আছেন। কারণ ইতিপূর্বে কারও তথ্য এভাবে নেওয়া হয়নি। কিন্তু চাকরিতে প্রবেশের সময় পুলিশ ভেরিফিকেশনে চাকরি প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ বা মামলা বা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে কিনা তা দেখা হয়।

সর্বশেষ খবর