বুধবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

‘আমাকে গুম করে দিন বাবাকে দেখতে পাব’

অসহায় শিশুর আর্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘আমাকে আমার পরিবার বলে সাবধানে চলতে। আমি সাবধানে চলে কী করব। আমাকে নিয়ে যাবে, আমাকে নিয়ে যেতে দিন, গুম করে দিন। তাহলে আমি আমার বাবাকে দেখতে পাব। আমি কেমন সন্তান যে, আমার বাবাকে পাঁচ বছর ধরে দেখতে পাই না, বাবা ছাড়া আমার কিছু ভালো লাগে না। আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন।’ কথাগুলো বলছিল পাঁচ বছর আগে ‘গুম’ হয়ে যাওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমনের মেয়ে আফসানা ইসলাম রাইদা। সে যখন কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিল তখন ভিজে যাচ্ছিল সভায় উপস্থিত সবার হৃদয়। জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে গতকাল ‘গুম হওয়ার পাঁচ বছর শেষ, আর অপেক্ষা কত দিন?’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এই আহাজারি ব্যক্ত করে রাইদা। ‘মায়ের ডাক’ নামের একটি সংগঠন এ সভার আয়োজন করে। পাঁচ বছর আগে গুমের শিকার সুমনের মা হাজেরা বেগমের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের ফয়জুল হাকিম লালা, মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরিচালক নাসির উদ্দিন এলএম প্রমুখ। ২০১৩ সালে গুম হওয়া স্বজনদের নিয়ে এ আলোচনা সভায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিখোঁজ সুমনের বড় বোন মারুফা ইসলাম ফেরদৌসী। এতে গুম হওয়াদের স্বজনরা বক্তব্য দেন। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দেখতে দেখতে পাঁচটি বছর শেষ হয়ে গেছে। সামনে চলে এলো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ‘মায়ের ডাকের’ পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আমাদের একটি দাবি, দলীয় ইশতেহারে গুম হওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য থাকতে হবে। মারুফা আরও বলেন, গত পাঁচ বছরে গুম হওয়া কেউ ফিরে আসেনি। কিন্তু গুম হওয়া পরিবারের অনেকেই কাঁদতে কাঁদতে না-ফেরার দেশে চলে গেছেন। মুন্নুর বাবা এই প্রেস ক্লাবে এসে সন্তানের ফিরে আসার দাবি জানিয়েছিলেন। এখন তিনি চিরদিনের জন্য আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। পারভেজ হোসেনের বাবা ও শ্বশুর না-ফেরার দেশে চলে গেছেন। তার মেয়ে হৃদি এখন কাউকে দাদু-নানু ডাকতে পারে না। সাইফুর রহমান সজীবের মা রেণু মারা গেছেন। ঝন্টুর বাবাও মৃত্যুবরণ করেছেন। গত বছর ‘মায়ের ডাক’ আয়োজিত এমনই এক আলোচনা সভায় যুবদল নেতা পারভেজ হোসেনের চার বছর বয়সী মেয়ে হৃদি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বক্তব্য দিয়ে হৃদয়বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। এবারের আলোচনাতেও কথা বলেছে হৃদি। এবার রাইদা বলছিল, ‘কত দিন বাবাকে দেখি না। বাবার আদর পাই না। আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন। আমি বাবার সঙ্গে স্কুলে যেতে চাই। বাবার সঙ্গে খেলতে চাই।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিল রাইদা। মারুফের বোন রত্না বলেন, ‘পাঁচ বছর হয়ে গেল আমার ভাইকে দেখতে পাই না। আমাদের কোনো কিছু চাওয়ার নেই, শুধু আমার ভাইকে ফেরত চাই।’ গুম হওয়া আবদুল কাদের মিয়া মাসুমের মা আয়শা আলী বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে সরকারের কাছে একটাই দাবি জানাচ্ছি, আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দিন। প্রধানমন্ত্রীও তো স্বজনহারা। তিনি কি স্বজন হারানোর ব্যথা বোঝেন না? আমি চাই আগামী ভোটের আগেই আমার সন্তানকে আমার কোলে ফিরিয়ে দিন।’

সর্বশেষ খবর