শিরোনাম
শনিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

দেড় বছরেও হয়নি জাবি ছাত্রলীগের হল কমিটি

পদ-পদবি না পেয়েই অনেকের শেষ হচ্ছে শিক্ষাজীবন

শরিফুল ইসলাম সীমান্ত, জাবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো গঠিত হয়নি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিটের ১৬টি হলের কমিটি। হল কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার জন্য একাধিকবার কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর করেনি বর্তমান কমিটি। এদিকে হল কমিটি গঠিত না হওয়ায় পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ। দীর্ঘ সময় রাজনীতি করার পরও কোনো ধরনের পদ না পেয়েই বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার আশঙ্কায় ভুগছেন বহু নেতা-কর্মী। ২০১৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর মো. জুয়েল রানা সভাপতি ও এস এম আবু সুফিয়ান চঞ্চলকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে শাখা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০১৭ সালের ২৯ এপ্রিল ঘোষণা করা হয় ২১৪ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। ফলে বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও এখনো হয়নি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে খ্যাত জাবির হল শাখা ছাত্রলীগের কমিটি। হল কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীরা বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে অভিযোগ করে বলেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণেই হল কমিটি আটকে আছে। তবে, হল কমিটি গঠনের জন্য কাজ করছেন বলে জানান শাখা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।   নেতা-কর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ : হল কমিটি গঠনে গত দেড় বছরে পদ প্রত্যাশী নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে ৩ বার করে জীবনবৃত্তান্ত জমা নিয়েছে বর্তমান কমিটি। জাবিতে ছেলে ও মেয়েদের জন্য ৮টি করে ১৬টি আবাসিক হল রয়েছে। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আবাসিক হলকে উপজেলা সমমানের বিবেচনা করে ৬১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ জাবির ১৬টি হলের জন্য কমপক্ষে ৯৭৬ জন নেতা-কর্মী দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় রয়েছেন।

 এদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ থেকে সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগের রাজনীতি করছেন। তাদের অনেকেরই এখন শিক্ষাজীবন শেষ। কারও কারও শেষের পথে। একটি পদ আর রাজনৈতিক স্বীকৃতির আশায় এখনো তারা অপেক্ষায় আছেন। অতি দ্রুত কমিটি গঠিত না হলে পদহীন কর্মী হিসেবেই তাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানতে হবে।

ভেঙে পড়েছে ছাত্রলীগের কমান্ড : বর্তমান কমিটি গঠিত হওয়ার পর বেশ কয়েকবার দ্রুততম সময়ের মধ্যে হল কমিটি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি জানান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু সে সবই পরিণত হয় গুজবে। ফলে বারবার আশাহত হয়ে হল কমিটির প্রত্যাশিত নেতা-কর্মীরা দিন দিন আস্থা হারিয়ে ফেলছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ওপর। পদ প্রত্যাশিতরা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের প্রতি ক্ষোভ জানানোর পাশাপাশি একজোট হয়ে হল কমিটির জন্য করছেন দফায় দফায় মিটিং। ফলে ভেঙে পড়েছে শাখা ছাত্রলীগের কমান্ড।

পদ পেয়েই লাপাত্তা : শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সদস্য ২১৪ জন। এদের মধ্যে ৪৪ জন সহসভাপতি, ১৮ জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ৫৩ জন সহ-সম্পাদক, ২৭ জন সদস্য এবং ৭২ জন অন্যান্য পদে রয়েছেন। পদ পাওয়ার আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে এসব সদস্যরা বেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু পদ পাওয়ার পর সেই চিত্র আমূল পাল্টে গেছে। পদ পাওয়ার আগে শাখা ছাত্রলীগের ছোটখাটো কর্মসূচিতেও তাদের সক্রিয় ভূমিকা দেখা যেত। কিন্তু এখন বড় কোনো কর্মসূচি থাকলেও তাদের দেখা মেলে না। ফলে বিভিন্ন কর্মসূচিতে সভাপতি আর সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে হাতে গোনা কিছু নেতা-কর্মীকেই অংশ নিতে দেখা যায়। বিশেষ করে গত ৩ ডিসেম্বর জাবিতে শাখা ছাত্রলীগের এক কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, ‘আমি এর আগেও হল কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলাম। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এসেছে শুনলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমপক্ষে এক থেকে দেড় হাজার ছেলে উপস্থিত থাকার কথা। জাবিতে তিন ঘণ্টার মতো থেকেও মাত্র ৩০-৪০ জনের বেশি দেখলাম না।’ এ সময় তিনি আবারও অতি দ্রুত হল কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা বলেন, ‘বর্তমান কমিটির অনেক নেতাই এখন ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক কাজে ব্যস্ত। তাই তাদের আর আগের মতো পাওয়া যায় না। সংসদ নির্বাচনের আগেই যে কোনো দিন আমরা হল কমিটি ঘোষণা করব।’ তবে সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান চঞ্চল বলেন, ‘আমরা এখন সংসদ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। হল কমিটির জন্য বিচার-বিশ্লেষণ চলছে। দেখা যাক সময় সুযোগ বুঝে কখন দেওয়া যায়।’

সর্বশেষ খবর