সোমবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি

রোমান চৌধুরী সুমন, নারায়ণগঞ্জ

ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি। জেলার পাঁচটি আসনে মনোনয়ন পাননি সাবেক কোনো এমপি। বেশির ভাগ আসনে দেওয়া হয়েছে নিষ্ক্রিয়, নাম না জানা ও জনবিচ্ছিন্ন প্রার্থী। মনোনয়নবঞ্চিত তালিকা থেকে বাদ যাননি খোদ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার, সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন, হেভিওয়েট প্রার্থী শাহ আলম, বদরুজ্জামান খান খসরুপুত্র মাহমুদুর রহমান সুমন ও সাবেক এমপি আতাউর রহমান খান আঙ্গুর। মনোনয়ন বঞ্চনা নিয়ে চলছে একেক প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের নানা অভিযোগ। মাঠপর্যায়ের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে আলোচনা করে দেখা যায়, জেলা বিএনপির ও স্থানীয় অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। একেকজনের মনোনয়ন বঞ্চনা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। তাদের মতে, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে তৈমূর আলম খন্দকারের মনোনয়ন বঞ্চনা নিয়ে টাকার খেলা হয়েছে। সেখানে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামানকে। তৈমূর আলম খন্দকার সাংবাদিকদের কাছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ‘যা বলার ৩০ ডিসেম্বরের পর বলব। শুধু এটুকু বলি, জিয়ার পরিবারের জন্য কোর্টে মামলা লড়ি, পত্রিকায় কলাম লিখি, রাস্তায় মার খাই, এর পরও কোন কারণে আমাকে মনোনয়নবঞ্চিত করে একজন ব্যবসায়ীকে মনোনয়ন দেওয়া হলো তা নিয়ে কথা বলব।’ তিনি বলেন, ‘আমার নেতা-কর্মীরা আমাকে ধিক্কার জানিয়ে বলেছে, আপনি কিসের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। আপনি আর এলাকায় আসবেন না। মনোনয়ন আনতে পারেন নাই। যাকে মনোনয়ন দিয়েছে তিনি তো রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে আমাদের পাশে ছিলেন না।’ নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা নজরুল ইসলাম আজাদ। সেখানে গুঞ্জন চলছে, বিএনপির প্রয়াত কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক খসরুপুত্র মাহমুদুর রহমান সুমনের মনোনয়ন নিশ্চিত ছিল। মরহুম কোকোর স্ত্রীর প্রভাবে সুমনকে মনোনয়ন বঞ্চিত করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে নেতা-কর্মীরা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। এখানে মনোনয়ন পেয়েছিলেন জেলা বিএনপি নেতা শাহ আলম ও প্রত্যাশী ছিলেন সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন। কিন্তু চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম নেতা মনির হোসেন কাসেমীকে। এ নিয়ে ফেসবুকে চলছে সমালোচনার ঝড়। তা এখন ভাইরাল। এ আসনের এমপি শামীম ওসমান অত্যন্ত প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় নেতা। এ আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রার্থী দিয়ে মূলত আসনটিকে আওয়ামী লীগের কাছে সমর্পণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন এখানকার বিএনপি নেতারা। কারণ ঐক্যফ্রন্টের এই নেতাকে সবে পরিচয় করিয়ে দিতে হচ্ছে ভোটারদের কাছে। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতা এস এম আকরাম। তিনি ১৫ বছর ধরে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। এ আসনে সাবেক এমপি ছিলেন অ্যাডভোকেট আবুল কালাম। এমপি হিসেবে তিনি নিট অ্যান্ড ক্লিন ইমেজের ছিলেন। এ আসনে মহাজোট প্রার্থী সেলিম ওসমান। তিনিও তার ভাই শামীম ওসমানের মতোই প্রভাবশালী। এ আসনে এমন নিষ্ক্রিয় ও জনবিচ্ছিন্ন নেতাকে কী ভেবে মনোনয়ন দেওয়া হলো এ নিয়ে বিব্রত বিএনপি নেতারা। মূলত বিএনপি নেতারা বলছেন, জেলার চারটি আসনে অত্যন্ত অজনপ্রিয়, জনবিচ্ছিন্ন, নাম না জানা প্রার্থী দিয়েছে বিএনপির জোট তথা ঐক্যফ্রন্ট। এ নিয়ে জেলা বিএনপিতে কাজ করছে হতাশা ও ক্ষোভ। কর্মী-সমর্থকদের অভিযোগ, মনোনয়ন বঞ্চনার ক্ষেত্রে কোথাও টাকার খেলা আবার কোথাও জিয়া পরিবারের সদস্যের প্রভাব কাজ করেছে। এসব ক্ষেত্রে মাঠে সক্রিয়, ত্যাগী নেতাদের অতীত দলীয় কর্মকাণ্ড আমলে নেননি মনোনয়ন-বাণিজ্যে লিপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা।

সর্বশেষ খবর