বুধবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
নির্বাচনী হাওয়া সারা দেশে

চট্টগ্রাম বিএনপির যত অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম বিএনপির যত অভিযোগ

চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে অধিকাংশ আসন নিয়ে বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের অভিযোগের পাহাড় জমেছে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে। এর মধ্যে প্রচারণায় বাধাদান, পোস্টার ছেঁড়া, হুমকি প্রদান, প্রার্থীসহ নেতা-কর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগ কর্মীদের হামলা ও গায়েবি মামলায় বিএনপি জোটের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের অভিযোগ অন্যতম। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ভোটারদের মধ্যে ‘ভীতি সৃষ্টির’ জন্য সরকারি দল ও পুলিশ প্রশাসনকে যেমন দায়ী করেছেন, তেমন ভোটারদের মনে ‘ভয়ের আবহ’ থাকার নেপথ্যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের দিন চলা বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডব ও ‘আগুনসন্ত্রাসকে’ দায়ী করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। নওফেল চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসনে নৌকা ও বিএনপি নেতা আমীর খসরু চট্টগ্রাম-১১ (ডবলমুরিং) আসনে ধানের শীষের কাণ্ডারি হিসেবে ভোটের মাঠে রয়েছেন। তবে নির্বাচন কর্মকর্তারা বলেছেন, কোনো ধরনের একচোখা আচরণ নয়, সবার প্রতি সমান আচরণ করা হবে। সংবিধানের ১২৬ ধারা অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা হিসেবে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কারও প্রতি অনুরাগ কিংবা বিরাগভাজন হতে চান না তারা। সাংবিধানিক দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করতে চান। বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান ও জেলা প্রশাসক ইলিয়াছ হোসেন চট্টগ্রামের ১৬ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ও তাদের প্রতিনিধিদের নিয়ে সোমবার পৃথকভাবে মতবিনিময় সভা করেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘অতীতের ১০টি সংসদ নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচন অনেক বেশি আলোচিত। সব দলের অংশগ্রহণের কারণে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। উৎসবমুখর এ পরিবেশ আমরা বজায় রাখতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘প্রার্থীদের সহযোগিতার কারণে চট্টগ্রামের নির্বাচনী পরিবেশ দেশের অন্যসব এলাকা থেকে এখনো ভালো রাখতে পেরেছি। নির্বাচন পর্যন্ত এ পরিবেশ আরও সুন্দর রাখতে চাই। আশা করি সব দল ও প্রার্থীর সহযোগিতা পাব।’ মতবিনিময় সভায় বিভাগীয় কমিশনারের উদ্দেশে বিএনপি নেতা আমীর খসরু বলেন, ‘ভোটারদের মধ্যে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় শঙ্কা ভোট দিতে যেতে পারব তো?’ আওয়ামী লীগ প্রার্থী নওফেল বলেন, ‘ভোটারদের মধ্যে কোনো ভয়ভীতি দেখছি না। তবে ভোটারদের শঙ্কার আরেকটি কারণ যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত নিবন্ধনহীন এক দলের লোকজন একটি জোটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে।’ চট্টগ্রাম-১০ আসনে বিএনপির প্রার্থী দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘রবিবার নয়াবাজারে বিজয় শোভাযাত্রার উদ্বোধনী বক্তব্য দেওয়ার সময় লাঠি ও অস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয়। তারা আমাকে গুলি করতে উদ্যত হয়।’ চট্টগ্রাম-৮ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাসদের মাঈনুদ্দীন খান বাদল বলেন, ‘দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা নিয়ে যেহেতু নির্বাচনে এসেছি পার্থক্য তো আমাদের আছেই। নির্বাচনে জড়িতদের দোষারোপ করে তাদের কাছ থেকে আবার সুষ্ঠু নির্বাচন চাইলে তা সম্ভব নয়।’ তিনি আইন অনুসারে কাজ করার জন্য বিভাগীয় কমিশনারসহ নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। বাঁশখালীর বিএনপি প্রার্থী জাফরুল ইসলাম বলেন, ‘বাঁশখালীতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে ২০০ মোটরসাইকেল নিয়ে প্রচারণা, এটা কি আচরণবিধিতে পড়ে?’ চট্টগ্রামের জেলা পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা বলেন, ‘পুলিশ কারও প্রতিপক্ষ নয়। উভয় দলের সম্প্রীতির মাধ্যমে নির্বাচন শেষ করতে চাই। আমাদের কাছে এমনও তথ্য আছে, বিদেশ থেকে কল দিয়ে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে অশ্লীলভাবে আমাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের গুজবও ছড়ানো হচ্ছে। ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এসব তো ঠিক নয়। আমরা সরকারি চাকরি করতে এসেছি। অর্পিত দায়িত্ব পালন করছি শুধু।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণায় যাতে কারও সমস্যা না হয়, সবার প্রতি যাতে সমান আচরণ করা হয় তা নিশ্চিত করতে কাজ করছি।’ সবাই মিলে একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে চান বলে জানান তিনি। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম বলেন, ‘গায়েবি মামলা বলে কিছু নেই। থানায় এসে কেউ অভিযোগ করলে পুলিশ অভিযোগের তদন্তের সময় যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারে।

নির্বাচনে প্রত্যেক প্রার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর