বুধবার, ২ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফল প্রত্যাখ্যান করা বিএনপির পুরনো বদভ্যাস : তথ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাসদ সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ‘হারলে ভোট প্রত্যাখ্যান বিএনপির পুরনো রাজনৈতিক বদভ্যাস। আর বিএনপির এবারের নির্বাচনী ফল প্রত্যাখ্যান দেশের রাজনীতিতে ষড়যন্ত্র-সংঘাতের অশনিসংকেত।’ গতকাল সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। সংলাপে সভাপতিত্ব করেন বিএসআরএফ সভাপতি শ্যামল সরকার।

সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মহসীন আশরাফ। কুষ্টিয়া-২ আসনে একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়লাভকারী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে বিএনপির পরাজয়ের কারণ বিএনপি নির্বাচনে মনোযোগের বদলে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ও গায়েবি নির্দেশের অপেক্ষায় ছিল। যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে নিয়ে সংঘাতের ভুল রাজনীতি এবং নেতৃত্বের সঙ্গে সমর্থক-কর্মীদের দূরত্ব তাদের ভরাডুবির অপর মূল কারণ।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ভুল রাজনীতির পাশাপাশি কর্মী-সমর্থক নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছেন বিএনপির নেতারা। মনোনয়ন নিয়ে বাণিজ্য আর অন্তঃকলহ ছিল ব্যাপক। এ ছাড়া পাঁচ বছর ধরেই বিএনপি ব্যস্ত ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করা, খালেদা জিয়ার মামলা এবং তারেকের অপরাধ ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টায়।

হাসানুল হক ইনু বলেন, মাঠপর্যায়ে বিএনপির নেতৃত্বহীনতা, বিএনপি প্রার্থীদের আয়েশি মনোভাব এবং মনোনয়ন নিয়ে বাণিজ্য তাদের ভরাডুবির কারণ হলেও আরও অনেক কারণ রয়েছে। গণতন্ত্র থেকে সরে গিয়ে জ্বালাও-পোড়াও, নাশকতা, হত্যা, খুন, ধ্বংসের অপরাজনীতি অনুসরণ করায় তাদের এই ভরাডুবি। গত ১০ বছর বিএনপি ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ রাজনীতি করেছে। বিরোধী দলের ভূমিকাও বিএনপি পালন করতে পারেনি। জনগণকে কোনো স্বপ্নও দেখাতে পারেনি। সংসদের ভিতরে-বাইরে তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তারা ভোটের সময় দায়িত্বহীন আচরণ করেছে। তারা নীবর ভোটবিপ্লবের কথা বারবার বলেছে কিন্তু তাদের কার্যক্রম ছিল প্রেসবিপ্লব। সারাক্ষণ ঢাকায় বসে সাংবাদিকদের সামনে এবং টেলিভিশনের পর্দায় উপস্থিত ছিল তারা। তিনি বলেন, নির্বাচনে মাঠপর্যায়ে বিএনপি-জামায়াতের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। তাদের অনেক প্রার্থী এলাকাতেই যাননি, ঢাকায় ‘আয়েশি’ জীবনযাপন করেছেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত মাঠপর্যায়ে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। তাদের সম্পর্ক আলগা হয়ে গিয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা পক্ষ ত্যাগ করতে শুরু করেছে। নির্বাচনে মন না দিয়ে ষড়যন্ত্র-চক্রান্তে মন দিয়েছিল বিএনপি। সঠিক প্রার্থীও দেয়নি। প্রার্থীরা মাঠেও যাননি।

তিনি বলেন, অন্যদিকে মহাজোট সরকার দেশ ও জনগণের উন্নয়নে একাগ্রভাবে কাজ করে চলেছে। মহাজোট সরকার পোশাকশিল্প, কৃষকের সার ও বীজ নিয়ে মাথা ঘামায়, নারীর উন্নয়নের বিষয়ে কথা বলে, ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় সরকারি সংসদ সদস্যরাও সংসদে প্রতিবাদ করেন। এসব কারণেই জনগণ মহাজোটকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছে। কিছু ভোটকেন্দ্রে বিএনপির ‘পোলিং এজেন্ট’ ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ খ-ন করে তিনি বলেন, ‘পোলিং এজেন্ট’ না ঢুকতে দিলে প্রিসাইডিং অফিসার বা রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করার নিয়ম। এমন একটি অভিযোগও মেলেনি।

হাসানুল হক ইনু বলেন, সারা দেশে ২৯৯ আসনে ৪০ হাজারেরও বেশি কেন্দ্রে রবিবার যে ভোট গ্রহণ হয়, সেখানে শূন্য দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ (০.০৫%) কেন্দ্রে বা ২২টি কেন্দ্রে সহিংসতার খবরে ভোট স্থগিত করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের তিন কেন্দ্রের ভোট স্থগিত থাকায় সে আসনের ফল স্থগিত রয়েছে। তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এত ভোটারের উপস্থিতি আগে কোনো দিন দেখিনি। এই নির্বাচন সবচেয়ে কম সহিংসতাপূর্ণ ছিল। পর্যবেক্ষকরাও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। ইলেকট্রনিক ভোটিং পদ্ধতির প্রথম প্রয়োগকেও সফল বলেছেন।’

নতুন মন্ত্রিসভা না হওয়া পর্যন্ত তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন জানিয়ে হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘যেটুকু সমস্যার সমাধান করতে পারিনি, সেই ঘাটতির জন্য আপনারা ক্ষমা করবেন। আমিও মানুষ, ফেরেশতা নই, শয়তানও নই।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ২০টি আসন পাওয়া জাতীয় পার্টি দলগতভাবে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকায় তারাই ফের বিরোধী দলের আসনে বসতে পারে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যদি আমন্ত্রণ জানান, আর তারা গ্রহণ করে, তবে তারা মন্ত্রিসভায় যাবে। আর গ্রহণ না করলে জোটের অন্য শরিকদের নিয়ে সরকার গঠন হবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে তথ্যমন্ত্রী সব সাংবাদিককে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান এবং শান্তিপূর্ণ একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সামরিক বাহিনীসহ সব সহযোগী সংস্থার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

সর্বশেষ খবর