শনিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বগুড়ায় বেগুনি বেগমের বাহারি পিঠার সমাহার

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় বেগুনি বেগমের বাহারি পিঠার সমাহার

বেগুনি বেগম ভাজেন বেগুনি। তৈরি করেন নানা নামের বাহারি পিঠা। পিঠা বিক্রি করেই সংসার চলছে তার। শীতকালে প্রায় ১০ ধরনের পিঠা তৈরি করেন। প্রতিদিন তিন হাজারেরও বেশি পিঠা বিক্রি করেন তিনি।

বগুড়া শহরের খান্দার এলাকায় কারমাইকেল সড়কে শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়ামের প্রবেশ পথের পাশে বেগুনি বেগম পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পিঠার দোকান করেন। তিনি জানান, প্রায় ২০ বছর ধরে শীতকালীন পিঠা-পুলির ব্যবসা করছেন। শীত পেরিয়ে গেলে অন্য কাজ করেন। বিকাল হলেই তারা পিঠার দোকান নিয়ে বসেন। তবে দুপুর থেকেই আয়োজন শুরু করতে হয়। কারণ দোকান বসানোর পর থেকেই বেচাবিক্রি শুরু হয়। সন্ধ্যার পর ক্রেতাসাধারণের ভিড় বাড়তে থাকে, চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। 

বেগুনি বেগমের দোকানে ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, ঝালপিঠা, ঝাল-মিষ্টি কুশলি পিঠা বানানো হয়। এর মধ্যে ভাপা প্রতি পিস ১০ টাকা, চিতই ১৫ টাকা, ঝাল পিঠা ১২ টাকা ও কুশলি প্রতি পিস ৭ টাকা বিক্রি করা হয়। পাশাপাশি বেগুনিও বিক্রি করা হয়। অনেকে আবার ঝালপিঠার সঙ্গে একটি ডিম দিয়ে তৈরি করে নেন। তখন দাম ২৫ টাকা করে নেওয়া হয়। এসব পিঠা তৈরিতে কড়াই, পাতিল, চালের গুঁড়া, গুড়, নারিকেল, ডিম, শুঁটকি ভর্তা, তেলসহ আনুষঙ্গিক সামগ্রী প্রয়োজন। দেখা যায়, চারকলের খড়িতে একসঙ্গে জ্বলে ছয়টি চুলা। প্রত্যেকটি চুলায় রাখা কড়াইয়ে বানানো হচ্ছে শীতের রকমারি পিঠা-পুলি। দুজন নারী ও একজন পুরুষ পিঠা তৈরির কাজ করছিলেন। একজন জ্বালানি হিসেবে কয়লা খড়ি এগিয়ে দিচ্ছেন। ক্রেতাসাধারণের চাহিদা অনুযায়ী পিঠা সরবরাহ করছেন দুজন। সেই ভ্রাম্যমাণ দোকানের তিন পাশ ঘিরে ক্রেতারা শীতকালীন রকমারি পিঠার স্বাদ নিতে অপেক্ষা করছেন। কেউ বসে আবার কেউবা দাঁড়িয়ে। তাড়াহুড়ো করার কোনো সুযোগ নেই। আগে এলে আগে পাবেন ভিত্তিতে ক্রেতাসাধারণের হাতে পিঠা তুলে দিচ্ছিলেন দুই তরুণ। এই দুই তরুণ বেগুনি বেগমের নাতি। এসব পিঠা কিনতে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও দেখা যায়। অনেকে দোকানে বসেই পিঠা খান। আবার কেউ কেউ পিঠা কিনে বাসায় নিয়ে যান। পিঠা ক্রেতা রফিকুল ইসলাম জানান, বগুড়ায় থেকে একটি কলেজে লেখাপড়া করেন। ইচ্ছা থাকলেও বাড়ি গিয়ে সহজে শীতের পিঠা খাওয়া হয়ে ওঠে না। তাই দোকান থেকেই বন্ধুদের সঙ্গে পিঠা নিতে এসেছেন। আবদুর রহমান সম্রাট, প্রভাষক আল আমিন, খালেদ মাহমুদসহ কয়েকজন জানান, নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়, তাই বাড়িতে নতুন কিছু তৈরি করা কঠিন। শীতকালে দোকানের পিঠার ওপরই নির্ভর করতে হয়।

কদিন আগে বেগুনি বেগমের পিঠার দোকানে দেখা গেছে, ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী মঞ্জুরুল করিম ১৫ মিনিট দাঁড়িয়ে আছেন চিতই পিঠার জন্য। এরপর রিকশায় চড়ে এলেন বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ। অর্ডার করলেন ১৫টি কুশলি, ৫টি চিতই আর ৫টি ঝাল পিঠার। প্রায় ২০ মিনিট অপেক্ষার পর তিনি সেই পিঠা পেলেন।

এভাবে প্রতিদিন শহর ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকেই পিঠার স্বাদ নিতে আসছেন খান্দার এলাকায়।

সর্বশেষ খবর