সোমবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাহারি পণ্যে আগ্রহী ক্রেতা

বাণিজ্য মেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

শীতের কনকনে বাতাস জানান দিচ্ছিল পৌষের বিদায়। হাড় কাঁপানো মাঘের শীত দরজায় পা রাখতে যাচ্ছে। স্কুল ছুটির পর ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মা শেহনাজ আক্তার তার কন্যা সিমিকে নিয়ে গতকাল এসেছিলেন ১৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায়। রবিবার কর্মদিবস হওয়ায় মেলায় প্রবেশের লাইন বেশ ফাঁকা ছিল। শেহনাজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানালেন, সময় মিলে না কন্যার স্কুল ছুটির পর তাই মেলায় এসেছি। সকালের দিকে খালি থাকলেও বিকাল হতেই মেলায় দর্শক উপস্থিতি বাড়তে থাকে। বরাবরের মতো এবারও দর্শক আকর্ষণে বাণিজ্য মেলার প্রধান ফটকটি দৃষ্টিনন্দন ও ব্যতিক্রমী নান্দনিকতায় তৈরি করা হয়েছে। এবার মেট্রোরেলের আদলে তৈরি করা সে ফটকের সামনে দর্শনার্থী অনেককেই সেলফি তুলতে দেখা যায়। গতকাল ছিল মেলার ৫ম দিন। সকাল ১০টায় মেলার ফটক খুললেও স্টলগুলো খুলতে খুলতে প্রায় দুপুর গড়িয়ে যায়। এর আগে শুক্র-শনি দুই সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মেলায় দর্শক সমাগম ছিল বেশ ভালো। গতকাল পরিবার নিয়ে যত না দর্শক উপস্থিত হয়েছিল তার চেয়ে বেশি বিভিন্ন বয়সী নারী তাদের পরিচিতজন ও শিক্ষার্থীরা বন্ধুদের নিয়ে দলবেঁধে মেলায় ঘুরতে যায়। সরেজমিন মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায় বিদেশি স্টলগুলোর মধ্যে থাই স্টলটি বাইরে থেকে যেমন দৃষ্টিকাড়া তেমনি স্টলের ভিতরের পণ্যসামগ্রী নিয়েও আগ্রহী দর্শক-ক্রেতা। থাইল্যান্ডের বিভিন্ন ইমিটেশন সামগ্রী, প্রসাধনী সামগ্রী, ঘরসাজানোর দ্রব্যাদি ও ব্যাগ ইত্যাদি পণ্য সেখানে বিক্রি হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই নারী ক্রেতাদের ভিড় এই স্টলে বেশি। মেলায় অন্যতম জনপ্রিয় স্টলগুলোর আরেকটি হচ্ছে ইরানি স্টল। এই স্টলে গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত নানা সামগ্রী ও রান্নায় ব্যবহৃত হয় এমন দ্রব্যাদি যেমন সাজানো আছে তেমনি মেয়েদের অলঙ্কারের মধ্যে বিভিন্ন ধাতু ও পাথরের চেইন, আংটি, লকেট ইত্যাদির প্রতিও দর্শকদের ভালো আগ্রহ রয়েছে। শান্তিনগর থেকে আসা এক গৃহিণী জানান, প্রতিবারই ইরানি স্টল  থেকে লকেটসহ চেইন সংগ্রহ করি। এবারও বোনকে নিয়ে এসেছি। এর বাইরে ইরানের মেলামাইন সামগ্রী নিয়ে গৃহিণীদের মধ্যে বেশ আগ্রহ দেখা যায়। পাশাপাশি ইরানি রান্নার মসলার স্টলে আগ্রহীদের দাঁড়িয়ে দরদাম করতে দেখা যায়। চাহিদা ভালো থাকায় এবারও বাণিজ্য মেলায় পাটপণ্যের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রীর স্টল দেখা যায়। এর মধ্যে দৃষ্টিনন্দন একটি স্টল হচ্ছে ‘কারুপণ্য’।

এ ছাড়া বেশ কিছু স্টলে পাটের তৈরি ব্যাগ, স্যান্ডেল, জুতা ও ঘর সাজানোর সামগ্রীও বিক্রি হচ্ছে। মেলায় আসবাবপত্রের দোকানগুলো বরাবরের মতো এবারও দৃষ্টি কাড়ছে। দ্বিতল আকৃতির এসব স্টলে খাট, ডাইনিং টেবিল, সোফা স্টে, ড্রেসিং টেবিল সাজিয়ে রাখা আছে। এসব স্টলের বিক্রয়কর্মীরা জানান, মেলার শুরুতেই ফার্নিচারের বিক্রি তেমন হয় না। ধীরে ধীরে বিক্রি বাড়তে থাকে।

মেলা প্রাঙ্গণে একটি স্টলের সামনে যেতেই একজন গলা ছেড়ে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টায় বলছিলেন, ‘মেলার প্রধান আকর্ষণ না দেখলে মিস’। স্টলটির সামনে কয়েকজন উৎসুক দর্শক দাঁড়িয়ে, তাদের কাছে যেতেই দেখা যায় এক দোকানি কাঠের তৈরি একটি যন্ত্রে আটার দলা রেখে চাপ দিয়ে রুটি বানিয়ে যাচ্ছেন। এর নাম রুটি মেকার। মেলায় প্রমোশনের জন্য দাম কমিয়ে তারা তিন হাজার টাকায় রুটি তৈরির মেশিন বিক্রি করছেন। এবারও মেলায় এক সারিতে বেশ কয়েকটি ব্লেজারের দোকান দেখা যায়। তবে সেখানে ক্রেতার উপস্থিতি তেমন একটা দেখা যায়নি। জুয়েল রানা নামের এক ব্লেজার বিক্রেতা বলেন, শীতে ব্লেজার বিক্রি বেশি হয়। আমরা সাধারণত দুই থেকে আট হাজার টাকায় ব্লেজার বিক্রি করি। তবে মেলার শেষদিকে দাম কমিয়ে দেওয়া হয়। তখন বিক্রিও বেড়ে যায়।

সর্বশেষ খবর