বৃহস্পতিবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

চট্টগ্রাম গণহত্যার বিচার হলো না ৩০ বছরেও

রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম গণহত্যার বিচার হলো না ৩০ বছরেও

বঙ্গবন্ধুকন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাঁচাতে গিয়ে ৩১ বছর আগে চট্টগ্রামে প্রাণ দেন অন্তত ২৪ জন সাধারণ মানুষ। ‘চট্টগ্রাম গণহত্যা’ নামে আলোচিত এ হত্যাকাে র এতটা বছরেও বিচার পেল না হতাহতদের পরিবার। উপরন্তু এই চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার বাদীও মৃত্যুবরণ করেছেন। এখনো শেষ হয়নি মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউর গ্রেনেড হামলার ঘটনাটিরও ১৬ বছর আগে সংঘটিত মানব ইতিহাসের     এই বর্বরতম বেদনা ও বিস্ময়ের ঘটনাটি। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে পাশবিক শক্তির বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা মানুষের এই আত্মাহুতির যথার্থ মূল্যায়ন হয়নি বলেই অভিযোগ অনেকের।

ফিরে দেখা : রাজপথে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। রক্তাক্ত শত মানুষ। কারও বুকে, কারও মাথায়, কারও বা মাথার পাশ দিয়েই গুলি। হামাগুড়ি দিয়ে কিংবা দৌড়ে প্রাণ রক্ষার চেষ্টায় দিগ্বিদিক ছুটে যাওয়া মানুষের হাজার হাজার জুতা-স্যান্ডেল ছড়ানো ছিটানো। আহত, ব্যথায় কোঁকানো মানুষের গোঙানির শব্দ, টিয়ার শেলের ধোঁয়া আর গুলির বিকট আওয়াজে এক অবর্ণনীয় পরিবেশ। এমন মৃত্যু-উপত্যকা থেকে বৃষ্টির মতো গুলির মুখেও মানববর্ম তৈরি করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে বাঁচান বীর চট্টগ্রামবাসী। পুলিশি বাধা ডিঙিয়ে নিরাপদে তাঁকে নিয়ে যান পাশের পরীর পাহাড়ের আদালত ভবনে। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারির এ গণহত্যাটি ঘটে তৎকালীন বিরোধী জোট নেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহর অভিমুখে পুলিশের নির্বিচার গুলিবর্ষণে। সেদিন লালদীঘি মাঠে পূর্বনির্ধারিত একটি জনসভার দিকে যাচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এ সময় পুলিশ গুলি চালালে হাসান, স্বপন, এথেলবাগ গোমেজসহ অন্তত ২৪ জন (মতান্তরে অর্ধশত) নিহত ও দুই শতাধিক লোক আহত হন। লাশ গুমেরও অভিযোগ ওঠে ব্যাপক। সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। তিনি স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, সেদিনের আত্মদানকারীদের যথাযথ স্বীকৃতি মেলেনি।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এ কে এম বেলায়েত হোসেন বলেন, ’৭১-এর পাকিস্তানি হায়েনাদের মতো সেদিন নিহতদের লাশ বাচবিচার না করে শ্মশানে পোড়ানো হয়। তখন অবস্থা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, ঘটনার পরপর মামলা দায়েরের মতো পরিবেশও ছিল না। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বাদীপক্ষে মামলা পরিচালনা করছেন। তিনি জানান, ঘটনার কয়েক বছর পর সেদিনে আক্রান্ত আইনজীবী শহীদুল হুদা মামলা দায়ের করেন। দুই দফায় অধিকতর তদন্ত শেষে এর চার্জশিট দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ঘটনা-পরবর্তী বিএনপি সরকারের সময় মামলাটি গ্রহণে গড়িমসি করা হয়। তিনি জানান, সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে থাকা মামলাটি নিয়ে এখন দেখা দিয়েছে নতুন এক প্রশ্ন। মামলার প্রধান আসামি তৎকালীন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মির্জা রকিবুল হুদা আমেরিকায় মারা গেছেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। তথ্যটি পুলিশ এখন খতিয়ে দেখছে।

এদিকে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার মাহবুবুর রহমান জানান, আসামি মির্জা রকিবুল হুদার মৃত্যু সংবাদের সত্যতা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যাচাই করা হচ্ছে।

সিএমপির স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান আবদুল ওয়ারিশ জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া থেকে একটি মৃত্যুসনদ আইনজীবীর মাধ্যমে অতিসম্প্রতি পাঠানো হয়, যেটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এখন যাচাইয়ের প্রক্রিয়া চলছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম আদালতে দায়িত্ব পালন করা পুলিশের সদ্য সাবেক এডিসি (প্রসিকিউশন) নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী জানান, অন্তত ছয় মাস ধরে পুলিশ সদর দফতরে চিঠি চালাচালি করেও নিশ্চিত হওয়া যায়নি দেশে এই আসামির ঠিকানা। স্বজন-পরিজন কাউকেই পাওয়া যাচ্ছিল না বলেও জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর