বৃহস্পতিবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

কারমাইকেল কলেজে ছাত্র সংসদ নেই ২৮ বছর

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

রংপুর কারমাইকেল কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচন নেই ২৮ বছর। এতে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটছে না। শিক্ষা নিয়ে সাধারণ ছাত্রদের অধিকার বাস্তবায়নে কোনো সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে জোরালো আওয়াজ তুলতে পারছে না ছাত্ররা। তবে কলেজ প্রশাসন দায়ী করেছে রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীদের জটিলতাকেই। এদিকে প্রতি বছর ভর্তিসহ বিভিন্ন বিভাগের ফরম পূরণে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ছাত্র সংসদ বাবদ ফি। জানা যায়, কারমাইকেল কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক, সম্মান, পাস কোর্স ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ২৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যয়ন করে। ছাত্র নেতৃত্ব বিকাশে ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৯৯০ সালে শেষবারের মতো ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়। পরবর্তীকালে ছাত্র সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর আর নির্বাচন হয়নি। কী কারণে নির্বাচন দেওয়া সম্ভব হয়নি এমন তথ্য অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক দলের হস্তক্ষেপ। যখন যে দলীয় সরকার ক্ষমতায় এসেছে, সেই দলীয় শিক্ষার্থীদের সংগঠন ও স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের হস্তক্ষেপের কারণে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়নি। ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দখলদারিত্বের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার পরিবেশও বিঘ্নিত হচ্ছে বলে একাধিক ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেছেন। কলেজের অনার্স পড়–য়া ছাত্র আল-আমিন   হোসেন বলেন, ‘ছাত্র সংসদের মূল উদ্দেশ্য হলো নেতৃত্বের বিকাশ। ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলা। কিন্তু এখন ছাত্রদের অধিকার নিয়ে ক্যাম্পাসে কথা বলা যায় না। কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সাধারণ ছাত্রদের ওপর চড়াও হয়, মারধর করে। আমরা চাই দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিয়ে ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং কলেজে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় রাখার ব্যবস্থা করা হোক।’ কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি সাইদুজ্জামান সিজার বলেন, ‘অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ, শিক্ষক পরিষদকে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, ডাকসু নির্বাচন শেষ হলে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে প্রশাসন।’ কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে অধ্যক্ষ জানিয়েছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।’ ১৯৯০ সালের শেষ ছাত্র সংসদের জিএস মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম মিজু বলেন, ‘কলেজ কর্তৃপক্ষকে ছাত্রসমাজের চাহিদার গুরুত্ব দিতে হবে। ছাত্র সংসদ না থাকার কারণে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হচ্ছে না। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনি বলেন, ‘শিক্ষাঙ্গন থেকে জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দেবে- এমন রাজনৈতিক নেতা উঠে আসে ছাত্র সংসদ থেকেই। ছাত্র রাজনীতির সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত কারমাইকেল কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া জরুরি।’কলেজ সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক অসীমা রায় লিপি বলেন, ‘২৮ বছর ধরে এখানে ছাত্র সংসদ নেই। দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া হোক।’

বাসদ মার্কসবাদী জেলা নেতা পলাশ কান্তি নাগ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা দাবি করে আসছি ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য কিন্তু এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।’

অধ্যক্ষ ড. শেখ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত লিখিত কোনো আবেদন আসেনি। আবেদন পেলে শিক্ষক পরিষদ নেতা, প্রত্যেক সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নিয়ে যে উপদেষ্টা কমিটি রয়েছে, তাদের নিয়ে নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা করা হবে।’

এদিকে দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হলেও ছাত্র সংসদের জন্য প্রতি বছরই ভর্তি এবং বিভিন্ন বিভাগের ফরম পূরণের সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২৫ টাকা করে ফি নেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর