রবিবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর রূপনগর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবার পুনর্বাসন বহুমুখী সমবায় সমিতির বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনেছেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক এক সাধারণ সম্পাদক। আত্মসাৎকৃত সম্পদের পরিমাণ ৯ কোটি ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

২০০৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সমিতির এসব আত্মসাৎকৃত অর্থের পরিমাণ এক খোলা চিঠিতে তথ্য-প্রমাণসহ          তুলে ধরেছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু শামীম। তবে এসব অভিযোগকে মিথ্যা, বানোয়াট ও মনগড়া বলেছেন অভিযুক্তরা। খোলা চিঠি ও তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, সমিতির অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৫ সালে তৎকালীন ঢাকা জেলা সমবায় অফিসার মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই বছরের ১৮ মে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, ভুয়া ঋণ প্রদানের মাধ্যমে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা, জমি বরাদ্দের নামে ৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, ভুয়া সাধারণ সভার মাধ্যমে ১৮ লাখ ৭ হাজার ৮৬০ টাকা এবং ২০০৬ সালে করা অডিটের উদ্ধৃত ৭ লাখ ৩৬ হাজার ১০৬ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। আর এসব টাকা আত্মসাতের জন্য দায়ী করা হয় সাবেক সভাপতি মৃত খোরশেদ আলম ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুধীর চন্দ্র রায়কে। এ ছাড়া গঠনতন্ত্রের নিয়ম বহির্ভূতভাবে ১১টি দোকান বরাদ্দে জালিয়াতির মাধ্যমে এক কোটি ৭৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া যায় সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অশোক চন্দ্র ভৌমিক ও বর্তমান কোষাধ্যক্ষ সুধীর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে। ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির সঙ্গে গোপন চুক্তির মাধ্যমে সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন সমিতির মোট প্রকল্পের শতকরা ৫ ভাগ সম্পদের বাজারমূল্য অনুযায়ী ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং চুক্তির মেয়াদোত্তীর্ণের ফলে গত ৩ বছরে ৬৯টি ফ্ল্যাট মালিকদের ১৫ হাজার টাকা মাসিক ভর্তুকিসহ মোট ৬ কোটি ৯২ লাখ ৬০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন বলেও অভিযোগ করা হয়। সমিতির নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তের জন্য গত বছরের ৪ জুন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ফামি খানম। এরপর গত ৩ জানুয়ারি আরেকটি আবেদন করেন সমিতির ৫ জন সাধারণ সদস্য।  এসব অভিযোগের বিষয়ে সমিতির কোষাধ্যক্ষ সুধীর চন্দ্র রায় বলেন, ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির ভর্তুকির টাকা পাওয়ার বিষয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করছি। আর যেসব অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে তা দিতে হয় তাই দিয়েছে, এর কোনো ভিত্তি নেই। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অশোক চন্দ্র ভৌমিক বলেন, যিনি অভিযোগ করেছেন অর্থ আত্মসাতের জন্য তিনিই দায়ী। তার নামে আদালতে চারটি মামলা রয়েছে। সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, যিনি অভিযোগ করেছেন তিনি মামলার আসামি। সামনা সামনি এলে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।  সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, সমবায় সমিতির তদন্তের অর্থ আত্মসাতের যে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছিল তা পরবর্তী সময়ে সংশোধন করা হয়েছিল। এখন যা অভিযোগ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভুল ও বানোয়াট। সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা ১২ বছর এ সমিতিতে থেকে কিছুই পাইনি। যা ছিল সব নিয়ে গেছে অভিযোগকারী ওই সাবেক সাধারণ সম্পাদক। সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, যিনি অভিযোগ করেছেন তার নামে ১২টি মামলা রয়েছে। ওই অভিযোগকারী সমিতির এখন সদস্য নন, তার মাথায় সমস্যা আছে। অভিযোগের সত্যতা থাকলে অভিযোগকারীকে আদালতে মামলা করারও আহ্বান জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর