সোমবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় মাছ

হাওরের কান্না : ৩

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় মাছ

অনিয়ম আর আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় এক সময়ে সিলেটের মৎস্য ভাণ্ডার বলে খ্যাত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল হাইল হাওর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় মাছ। আর চা, লেবু, আনারস ও ফসলি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করায় দেশি মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে বলেও জানান বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি খাল-বিলের নাব্যতা কমে যাওয়া, ডোবা ও জলাশয় ভরাট হওয়া, মা মাছের আবাসস্থলের অভাব, ডিম ছাড়ার আগেই মা মাছ নিধন, বিল ছেচে মাছ ধরা, বিদেশি রাক্ষুসে মাছের চাষ করা, মাছের প্রজননে ব্যাঘাত ঘটানো, কারেন্ট জালের অবৈধ ব্যবহার, জলাশয় দূষণ, মৎস্য আইনের পরিপন্থী উপায়ে মাছ আহরণ করার ফলে দেশি প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। জানা যায় এই হাইল হাওরে আগে ৯৮ প্রজাতির দেশীয় মাছ ছিল। এর মধ্যে ২১ প্রজাতি পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আর বিলুপ্তির পথে রয়েছে ১১ প্রজাতি। এরই মধ্যে হাইল হাওর থেকে একবারেই  বিলীন হয়ে গেছে মহাশোল, গুজিআইড়, চেকা, ছ্যাপচেলা, লালখলিশা, চাপিলা, নাফতানি, বাঘাইড়, খারুয়া, বাচা, বাঁশপাতা, রিটা, নাপতে কৈ, একথুটি, টাটকিনি প্রজাতির দেশীয় মাছ। বিলুপ্তির পথে রয়েছে রানী মাছ, তারাবাইন, পাবদা, গুলসা, গুটিবাইন, চিতল, গজার, মেনি, কুটিয়া, ফলি, চেকা, চাপচেলা, লাল খলিশা, শাল বাইন, কাকিলা, দাড়কিরা, তিত পুঁটি মাছ। উপজেলা মৎস্য অফিসের দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০ বছর আগে হাইল হাওরে ২ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ উৎপাদন হতো। এখন উৎপাদন হচ্ছে ২ হাজার ১৪৫ মেট্রিক টন। আর ২০ বছর আগে হাওরে প্লাবন ভূমি ছিল ৭ হাজার ৩০০ হেক্টর। আর এখন কমে গিয়ে প্লাবন ভূমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭৫০ হেক্টরে। হাওরে ছোট-বড় বিল ছিল ৬৪টি। এর মধ্যে পাঁচটি ভরাট হয়ে বর্তমানে আছে ৫৯টি। সরকারি হিসাবে এই হাওরে বেসরকারি মৎস্য খামারের সংখ্যা রয়েছে ৪২টি। তবে স্থানীয় এলাকাবাসীর মতে প্রায় ৪০০টি। উপজেলা ভূমি অফিসের তথ্যে, হাওরে শুধুমাত্র রাজা ফিসারিজের দখলেই রয়েছে ৬১.৯২ একর জমি। দখলকৃত কৃষি জমি ও প্লাবন ভূমি খনন করে গড়ে তোলা হয়েছে মাছের খামার। মৎস্যজীবীরা জানান, অধিক মুনাফার আশায় ফিশারিগুলোতে হাইব্রিড মাছের চাষ করতে গিয়ে জলাশয়গুলো থেকে দেশি মাছের বিলুপ্তি ঘটানো হয়েছে। ২০০৩ সালের ১ জুলাই সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে হাইল হাওরের চাপড়া, মাগুড়া ও যাদুরিয়া বিল নিয়ে গঠিত প্রায় ১৭০ হেক্টর আয়তনের একটি জলাভূমি বাইক্কা বিলকে স্থায়ী মৎস্য অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা দেয়। সেই অভয়াশ্রমটিও এখন হুমকির মুখে রয়েছে। বাইক্কা বিল সংশ্লিষ্টরা জানান, অভয়াশ্রমের চার পাশের সরকারি খাস জমির দখলদাররা কৌশলে অভয়াশ্রমের মাছ তাদের জমিতে নিয়ে যাচ্ছে। হাইল হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষার দায়িত্বে থাকা ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইকোসিস্টেমস অ্যান্ড লাইভলিহুডস (ক্রেল) এর আঞ্চলিক সমন্বয়ক পলাশ সরকার ও হাইল হাওর সাইট কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, সেচ দিয়ে মাছ ধরে মাছের আবাসস্থল নষ্ট করা যাবে না। হাওরে ঘন ঘন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর