শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিকল্প পেশায় মৎস্যজীবীরা

হাওরের কান্না : ৪

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

বিকল্প পেশায় মৎস্যজীবীরা

মৎস্যসম্পদের উন্নয়ন হলে উন্নতি হবে মৎস্যজীবীদের। কেবল প্রকৃত মৎস্যজীবীরাই বুঝতে পারেন জলাভূমির কদর। তারা তাদের নিজেদের জীবন-জীবিকার তাগিদে কখনই হাওরের জলাশয় ধ্বংস হতে দেবেন না। তাই ‘জাল যার জলা তার’ এ নীতিতেই প্রকৃত মৎস্যজীবীদের অনুকূলে জলাভূমি ইজারা দেওয়ার কথা বলা রয়েছে জলাভূমি ইজারা নীতিমালায়। আর এ ঘোষণাটি দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও একই নীতিতে জলমহাল ইজারা দেওয়ার জন্য বলে আসছেন। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে জলমহাল ইজারা বন্দোবস্ত কমিটির সভায় তৎকালীন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। কিন্তু আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল হাইল হাওরে। এ উপজেলায় মৎস্য সমবায় সমিতির নাম ব্যবহার করে একশ্রেণির চালাক লোক জলমহাল ইজারা নিয়ে সুবিধা ভোগ করছেন। তারা পর্দার আড়ালে থেকে অর্থ প্রদান করে জলমহালের মালিক বনে যান। ওইসব লোকের কারণেই প্রকৃত মৎস্যজীবীরা জলাশয় ইজারা নিতে পারছেন না। আর এ কারণে নিঃস্ব হওয়ার জোগাড় দেশের অন্যতম বড় এই হাওরের হাজারো মৎস্যজীবীর। উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, হাইল হাওরের মৎস্যভা ার শূন্য হয়ে যাওয়ায় এ হাওরের ৩ লাখ মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। বেকার হয়ে পড়েছে ৫০ হাজারের বেশি মৎস্যজীবী পরিবার। হাইল হাওরের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে নিয়োজিত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিএনআরএসের ক্রেল প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে উপজেলার চারটি ইউনিয়ন নিয়ে বিস্তৃত হাইল হাওরের পাড়ে রয়েছে ৬০টি গ্রাম। এসব গ্রামে ৩০ হাজার বসতবাড়িতে ১ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি মানুষ বাস করে; যার অধিকাংশই মৎস্যজীবী। ক্রেল প্রকল্পের মাধ্যমে হাওর এলাকার ১ হাজার দুজনকে বিকল্প জীবিকায়নের পথ করে দেওয়া হয়। একসময় হাইল হাওরে বর্ষা মৌসুমে বিস্তীর্ণ জলাশয়ে মাছ ধরতে কোনো বাধা ছিল না। শুকনো মৌসুমে হাওরের পানি নেমে গেলে বিস্তীর্ণ জমিতে বোরো ধানের আবাদ হতো। এভাবেই হাওরপাড়ের মানুষ বছরের ছয় মাস পানিতে, আর ছয় মাস শুকনোয় কাটিয়ে দিত। কিন্তু এখন আর এই চিত্র নেই। মৎস্যজীবী হেলাল মিয়া, আবদুল হেকিম ও আবদুস সালাম জানান, ‘এখন হাওরে নামতে গেলে ইজারাদাররা বাধা দেন। তাদের টাকা না দিলে জলাশয়ে মাছ ধরা যায় না। অনেক গরিব মৎস্যজীবীর পক্ষেই এ টাকা দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই তারা বিকল্প পেশায় যাচ্ছেন।’ ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইকোসিস্টেমস অ্যান্ড লাইভলিহুডসের (ক্রেল) ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়ক পলাশ সরকার বলেন, ‘এখন সাধারণ মৎস্যজীবীরা হাওরে মাছ ধরার জায়গা পাচ্ছে না। ইাজারাদাররা তাদের লিজের জায়গায় সাধারণ মৎস্যজীবীদের মাছ ধরতে দিচ্ছেন না। এ ছাড়া হাওরের প্লাবনভূমিতে মানুষ পুকুর করায় মাছ ধরার জায়গা কমে আসছে।’ সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সহিদুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, হাইল হাওর এখন মাছশূন্য হয়ে পড়েছে। এ হাওর ঘিরে যারা জীবিকা নির্বাহ করতেন তারা এখন পেশা বদল করতে ব্যস্ত।’

সর্বশেষ খবর