রবিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে একের পর এক খুন

পরকীয়া কেন্দ্রিক অপরাধ বাড়ছে

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে পরকীয়ার জেরে বাড়ছে পারিবারিক অপরাধ। পরকীয়াকে কেন্দ্র করে ঘটছে একের পর এক খুন, আত্মহত্যা এবং নির্যাতনের ঘটনা। পুলিশ বলেছে, পারিবারকে কেন্দ্র করে এসব অপরাধ আগে থেকে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তবে সমাজ সচেতনতাই পারে এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ করতে। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) বিশেষ শাখার উপ-কমিশনার ওয়ারিশ আহমেদ বলেন, অনেক ক্ষেত্রে পারিবারিক অপরাধের তথ্য আমরা পাই না। তাই আগে থেকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয় না। তবে যেগুলোর তথ্য আমাদের কাছে আসে, তা আমরা সমাধানের চেষ্টা করি।’ তিনি বলেন, সামাজিক সচেতনতাই পারে পারিবারিক অপরাধ রোধ করতে। তাই সিএমপি কমিউনিটি পুলিশিংয়ের ওপর জোর দিয়েছে। কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

সিএমপি সূত্রে জানা যায, চট্টগ্রামে অন্যান্য অপরাধ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তুলনামূলকভাবে বেড়েছে পরিবারকেন্দ্রিক অপরাধ। সম্প্রতি যে কয়েকটি হত্যাকাণ্ড হয়েছে তার উল্লেখযোগ্য একটি অংশ হয়েছে পারিবারিক কলহের জেরে। মূলত স্বামী-স্ত্রী পরকীয়াকে কেন্দ্র করে এসব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। যার অন্যতম শিকার হচ্ছে নারী। ২০১৮ সালে সিএমপিতে ৪০৫টি নারী নির্যাতনের মামলা রেকর্ড হয়। ২০১৭ সালে এ সংখ্যা ছিল ৩৫০টি।  ২০১৬ সালে যা ছিল ৩৪৪টি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সালিশি আদালতের দেওয়া তথ্য অনুযায়ীÑ প্রতিদিন বিবাহ বিচ্ছেদ চেয়ে সালিশি কেন্দ্রে গড়ে ১৫টি আবেদন জমা পড়ে। আবেদনকারীদের অধিকাংশই হচ্ছে নারী। এতে বিচ্ছেদের উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে পরকীয়ার জেরে সংসারে অশান্তি ও স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্য।

চট্টগ্রামে পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তি এবং আইনি সহযোগিতা দিতে কাজ করছে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)। তাদের দেওয়া তথ্য মতে চট্টগ্রামে পারিবারিক বিরোধের অন্যতম কারণ হচ্ছে পরকীয়া। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক আস্থাহীনতা, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একে অপরের প্রতি সন্দেহ-অবিশ্বাসসহ নানা কারণে চট্টগ্রামে পারিবারিক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। উচ্চবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবারে এ ধরনের অপরাধ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সিএমপির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সিএমপিতে পরকীয়াকে কেন্দ্র করে অপরাধ বাড়ছে দিন দিন। তবে অনেক পরিবারে এ সমস্যা থাকলেও লোকলজ্জা এবং সামাজিক মর্যাদার কথা ভেবে স্বামী বা স্ত্রীর পরকীয়ার বিষয়টি নীরবে সহ্য করে চলেছে। এসব পরিবারে নিয়মিতই ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকে। এসব কারণে ঘটেছে খুন ও নির্যাতনের ঘটনা। অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। খুন কিংবা বড় ধরনের আঘাত ঘটলেই বিষয়টা তখন প্রকাশ্যে আসে। বাকিটা থেকে যায় পর্দার আড়ালে। ওই কর্মকর্তার দাবি, নগরীতে এ ধরনের যত অপরাধ হয়, তার মধ্যে মাত্র এক শতাংশ প্রকাশ্যে আসে।

সর্বশেষ খবর