দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে দুজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তারা হলেন- আনিসুর রহমান ওরফে বাবুল ও ইয়াসিন তালুকদার। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে হাজারীবাগের সনাতনগড় বউবাজার থেকে আনিসুর রহমান ওরফে বাবুলকে (৩৬) গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হাজারীবাগের নবীপুর লেনের একটি দোকান থেকে চক্রের অপর সদস্য বিকাশ এজেন্ট ইয়াসিন তালুকদারকে (২৩) গ্রেফতার করে র্যাব। তাদের কাছ থেকে ২১টি মোবাইল ফোন ও ভুয়া রেজিস্ট্রেশন করা ২৬টি সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর কারওরান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে র্যাব-২-এর কোম্পানি কমান্ডার (সিপিসি-৩) মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তিরা ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৫০০ সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এরা দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মোবাইলে কল দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
ব্রিফিংয়ে র্যাব কর্মকর্তা মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, দেশব্যাপী দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান জোরদারের পর থেকে এই চক্রের অপতৎপরতা বেড়ে যায়। তারা সরকারি টেলিফোন ডিরেক্টরি থেকে ফোন নম্বর নিয়ে সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাদের টার্গেট করে দুর্নীতির মামলার ভয়ভীতি দেখাতেন। এ জন্য মামলার ভুয়া নম্বর দিয়ে খোঁজ নিতেও বলতেন তারা। এরপর তারা বিকাশের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিতেন।জানা গেছে, ভুয়া দুদক সদস্যদের বিরুদ্ধে আসল দুদক কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। ২৭ জানুয়ারি দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে র্যাব মহাপরিচালক বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠির তদন্তে নেমে এই চক্রের মূল হোতাসহ দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। এই চক্রের আরও সাত থেকে আটজন পলাতক রয়েছেন এবং আটকদের একজন গুরু রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, পাঁচ বছরে প্রায় পাঁচ শ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দুর্নীতির মামলা রুজুর ভয় দেখিয়ে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে চক্রটি। চক্রের সদস্য ইয়াসিন তালুকদার একজন বিকাশ এজেন্ট। হাজারীবাগে ৪২/১ নবীপুর লেনে সাইফুল এন্টারপ্রাইজ টেলিকম নামে তার একটি দোকানও রয়েছে। ওই দোকানে তিনি অন্য মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে সিমের ভুয়া রেজিষ্ট্রেশন এবং বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলতেন। তাদের ৭ থেকে ১০ জনের গ্রুপ রয়েছে। তারা দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করে। তারা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরগুনাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা তুলে নিত।
গ্রেফতার আনিসুরের বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার লুন্দি গ্রামে। দুদকের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান জোরদারের পর প্রতারণার ফন্দি আঁটেন আনিসুর রহমানদের প্রতারক চক্রটি। পরিকল্পনা অনুযায়ী চক্রটি সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করতেন। প্রাথমিকভাবে তারা সরকারি বিভিন্ন দফতরে সশরীরে গিয়ে মোবাইল বা টেলিফোন নম্বর সংগ্রহ করতে শুরু করেন। এভাবে বিভিন্ন দফতর থেকে খুব বেশি তথ্য সংগ্রহ করতে না পেরে তারা সরকারি টেলিফোন ডিরেক্টরি থেকে বিভিন্ন সরকারি দফতরের টেলিফোন ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করেন। তথ্য পাওয়ার পর ওই সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তারা দুর্নীতির মামলা প্রক্রিয়াধীন বা দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ হচ্ছে এমন ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করতেন।