শনিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে সাইনবোর্ডে বিদেশি ভাষা

হাই কোর্টের নির্দেশনা উপেক্ষিত

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

উচ্চ আদালত সাইনবোর্ড বাংলায় লেখার নির্দেশ দেয় ২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু রায়ের পর পাঁচ বছর পার হলেও চট্টগ্রামে এখনো দেখা যায় বিদেশি ভাষায় লেখা সাইনবোর্ড। বাংলা লেখার সাইনবোর্ড স্থাপনে এখনো অনেকেই উদাসীন। ফলে সর্বত্র বিদেশি ভাষার সাইনবোর্ড দৃশ্যমান হচ্ছে।

তবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) বিদেশি ভাষায় লেখা সাইনবোর্ড কালো কালি দিয়ে মোচনের উদ্যোগ নেয়। গত বছরের ১০ অক্টোবর চসিকের উদ্যোগে বিদেশি ভাষার সাইনবোর্ড কালো কালি দিয়ে ঢেকে দেওয়ার অভিযান পরিচালিত হয়। ইতিমধ্যে প্রায় ১৫টি অভিযানে তিন শতাধিক বিদেশি ভাষার সাইনবোর্ড কালো কালি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ উদ্যোগ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে অভিযোগ বাংলা ভাষাপ্রেমীদের।

এখন চলছে ভাষার মাস। ভাষা আন্দোলনের ৬৭ বছর পরও বাঙালিকে ইংরেজি ভাষায় লেখা সাইনবোর্ড দেখতে হচ্ছে। বাণিজ্যিকসহ সর্বত্র বিদেশি ভাষার প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি দৃষ্টিকটু হলেও নগরবাসী অনেকটা নিরুপায় বলে জানা যায়। চসিক স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা জজ) জাহানারা ফেরদৌস বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ইংরেজিতে লেখা সাইনবোর্ড কালো কালি দিয়ে ঢেকে দেওয়ার অভিযান পরিচালনা করা হয়। ইতিমধ্যে পরিচালিত অভিযানে অনেক সাইনবোর্ডে কালো কালি দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান ইংরেজিতে সাইনবোর্ড স্থাপন করেছে তাদের জরিমানাও করা হচ্ছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।’

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরের বিভিন্ন স্থানে দেখা যাচ্ছে ইংরেজি লেখা সাইনবোর্ড। বাণিজ্যিক সাইনবোর্ডের বেশির ভাগই ইংরেজিতে লেখা। বিভিন্ন দোকান, শিক্ষা-স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিদেশি প্রতিষ্ঠানের শাখাসহ প্রায় সব সাইনবোর্ড ইংরেজিতে লেখা। চসিকসূত্রে জানা যায়, একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালত ‘দেশের সব

সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার, গাড়ির নম্বরপ্লেট সরকারি দফতরের নামফলক এবং গণমাধ্যমে ইংরেজি বিজ্ঞাপন ও মিশ্র ভাষার ব্যবহার’ বন্ধের আদালতের নির্দেশনার বাস্তবায়নে চসিককে ২০১৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে বাংলা ভাষায় প্রতিস্থাপনের নির্দেশ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি আবারও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সিটি করপোরেশন আওতাধীন এলাকায় (দূতাবাস, বিদেশি সংস্থা ও তৎসংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র ছাড়া) যেসব প্রতিষ্ঠানের নামফলক, সাইনবোর্ড, ব্যানার ইত্যাদি বাংলায় লেখা হয়নি তা স্ব উদ্যোগে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় লিখে প্রতিস্থাপন এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স নতুন/নবায়ন করার অনুরোধ করা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অন্যদিকে, আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ১৪ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়ে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডগুলোকে আদেশটি কার্যকর করতে বলে। ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে দ্রুত সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার ইংরেজির স্থলে বাংলায় রূপান্তরের উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করে।

সর্বশেষ খবর