শনিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

মোবাইল ফোন প্রতারকরা ধরাছোঁয়ার বাইরে

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটের একটি সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা তানজিল মাহমুদ। মামলায় কারান্তরীণ সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে। গত ৩১ জানুয়ারি তার বড় বোনের কাছে ফোন আসে কারাগারে হার্ট অ্যাটাক করেছেন তানজিল। কারা কর্মকর্তা পরিচয়ে ফোনের ও-প্রান্ত থেকে জানানো হয়, উন্নত চিকিৎসার জন্য এখনই তাকে নিতে হবে বাইরের হাসপাতালে। কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষারও প্রয়োজন। এজন্য ৫০ হাজার টাকা লাগবে। দ্রুত এই টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠানোর পরামর্শ দেন কারা কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী ওই ব্যক্তি। ফোন পেয়েই ভাইকে বাঁচাতে ১৫ হাজার টাকা বিকাশ করেন তানজিলের বোন। বাকি টাকা পাঠাতে সময় নেন এক ঘণ্টা। এর মধ্যে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে খোঁজ নেন কারাগারে। জানতে পারেন, তানজিল সুস্থ আছেন। প্রতারণার বিষয়টি টের পাওয়ার পর আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না তার।

গত জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে একইভাবে সিলেটের এমসি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের এক শিক্ষকের কাছে ফোন আসে। ফোনদাতা নিজেকে পরিচয় দেন অপহরণকারী চক্রের সদস্য হিসেবে। ওই শিক্ষকের স্কুলপড়–য়া ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে এবং তাৎক্ষণিক

৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানায় ওই ব্যক্তি। ফোনের সংযোগ না কেটে কলেজের সামনের যে কোনো দোকান থেকে নির্দিষ্ট নম্বরে ওই টাকা বিকাশ করার শর্ত দেওয়া হয়। একমাত্র ছেলে অপহৃত হওয়ার খবরে পাগলপ্রায় শিক্ষক সঙ্গে সঙ্গেই ১৫ হাজার টাকা বিকাশ করেন। এর মধ্যে তিনি অন্য ফোন নম্বরে যোগাযোগ করেন স্ত্রীর সঙ্গে। স্ত্রী জানান, তিনি বাচ্চাকে স্কুল থেকে নিয়ে বাসায় ফিরছেন। বাচ্চা অপহৃত হয়নি এমন খবরে শিক্ষকের মনে স্বস্তি ফিরলেও প্রতারণার ঘটনায় হতভম্ব হন তিনি। বিষয়টি তিনি পুলিশকেও জানান। শুধু ব্যাংক কর্মকর্তা তানজিলের পরিবার বা এমসি কলেজের ওই শিক্ষকই নন, গত এক মাস ধরে সিলেটে ফোনে প্রতারণার ঘটনা বেড়েই চলছে। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঘটছে এরকম ঘটনা। প্রতারিত ব্যক্তি নিজের নির্বুদ্ধিতার কারণে লজ্জায় তা প্রকাশ করা বা আইনের আশ্রয় নেওয়া থেকেও বিরত থাকছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যেসব দম্পতির একমাত্র সন্তান প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে তাদের টার্গেট করে অপরাধী চক্রের সদস্যরা। এরপর শিশুসন্তানকে অপহরণের কথা বলে হাতিয়ে নেয় টাকা। ফোন দেওয়ার পর ওই চক্রের সদস্যরা ফোনের সংযোগ না কেটে দ্রুত টাকার জন্য তাগিদ দেয়। তাই অনেকে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়েরও সুযোগ পান না। এ ছাড়াও ওই চক্রের টার্গেটে থাকে কারান্তরীণ লোকজন ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার। কারান্তরীণ ব্যক্তি হার্ট অ্যাটাক করেছেন, চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে টাকার প্রয়োজন অথবা নিখোঁজ ব্যক্তি অপহৃত হয়েছেন বা মুক্তির জন্য টাকা দাবি করা হয়। টাকা নেওয়ার পর মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দেয়। যাতে পরবর্তীতে প্রতারক চক্রকে শনাক্ত করাও কঠিন হয়ে পড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে। প্রতারণায় ব্যবহৃত ফোন ব্যবহারকারীর ব্যাপারে খোঁজ নিতে গেলে দেখা যায় ওই নম্বরটিও অনিবন্ধিত।

ফলে অধরাই থেকে যায় ওই চক্রের সদস্যরা।

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা জানান, ‘কেউ বিকাশে টাকা চাইলে তাৎক্ষণিক না দিয়ে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো উচিত। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বিচলিত না হয়ে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। তাৎক্ষণিক এরকম অভিযোগ পেলে প্রতারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়। বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির অনিবন্ধিত সিম ব্যবহার করে এসব প্রতারণা করায় প্রতারকদের শনাক্ত করাও কঠিন হয়ে পড়ে।’

সর্বশেষ খবর