বৃহস্পতিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

রাজধানীতে মা-ভাবী খুনে শফিকুল গ্রেফতার

যাত্রাবাড়ীতে নারী খুনে নানা রহস্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর দক্ষিণখানের সেই শফিকুল ইসলাম (৩৮) গ্রেফতার হয়েছেন। তারই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ঝরে গেছে দুটি প্রাণ। এর মধ্যে আছেন শফিকুলের মা হামিদা বেগম (৬০) ও ভাবী শারমিন আক্তার (৩৫)। গতকাল সকালে দক্ষিণখানের টিআইসি কলোনি এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানান দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তপন চন্দ্র সাহা।

জানা যায়, শফিকুল ইসলামের মা, ভাই ও ভাবি উত্তরার সেক্টর-৬ সংলগ্ন রেললাইনের পূর্ব পাশে টিআইসি কলোনিতে থাকতেন। শফিকুল দীর্ঘদিন ইতালি ছিলেন। গত বছর ডিসেম্বরে তিনি দেশে ফেরেন। টাকা-পয়সার বিষয়ে সোমবার বিকালে তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হয়। এ সময় শফিকুলের সঙ্গে তার মা হামিদা বেগমের বাগ্বিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে শফিকুল ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার মাকে আঘাত করতে যান। তাকে বাধা দিতে গেলে ভাবি শারমিন আক্তার ঘটনাস্থলে অস্ত্রের আঘাতে মারা যান। এতে হামিদা বেগমের পেটে আঘাত লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় হামিদা বেগমকে টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর থেকেই শফিকুল পলাতক ছিলেন বলে জানায় পুলিশ। নারী খুনের রহস্য গৃহকর্মীর কাছে : সালমা (৩৫) খুনের ঘটনায় তার বাসার গৃহকর্মী ফোরকানকে (১৮) খুঁজছে পুলিশ। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর উত্তর কুতুবখালীতে ফ্ল্যাটে খুন হন ওই নারী। পলাতক গৃহকর্মীই এ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত- এমন ধারণা তদন্ত কর্মকর্তাদের। তারা মনে করছেন, তাকে গ্রেফতার করতে পারলে জানা যাবে আসল রহস্য। তবে যে নারী খুন হয়েছেন তার ‘ননদ’ বলে পরিচয় দেওয়া এক নারীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল ঘটনাস্থল থেকে।

জানা যায়, ননদ বলে পরিচয় দিলেও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের হেফাজতে থাকা রাবেয়া নামের আহত নারী নিহত সালামার ননদ নন বলে স্বীকার করেছেন। রাবেয়ার ভাষ্যমতে, ফোরকানই খুন করেছে। কিন্তু কেন? সে বিষয়ে রাবেয়া মুখ খুলছেন না। এ ছাড়া যাকে সালমার স্বামী বলা হচ্ছে সেই আবুল কালামও নিহত সালমার স্বামী নন বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এই তিনজনের সম্পর্ক ঘিরেই খুনের রহস্য খুঁজছে পুলিশ।

রবিবার সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ীর উত্তর কুতুবখালীর স্কুল রোডের ২২/বি নম্বর নিজ বাসায় সালমা খুনের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ওই বাড়িতে গিয়ে তালাবদ্ধ অবস্থায় আহত রাবেয়াকে (৩০) উদ্ধার করে। পরে তার চিকিৎসা শেষে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে আসে পুলিশ।

তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার এসআই জুলফিকার আলী জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাবেয়া জানিয়েছেন, ফোরকান হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে সালমাকে খুন করেছে। এ সময় বাধা দিতে গেলে তাকেও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে ঘরে আটকে রেখে পালিয়ে যায় ফোরকান। এ ছাড়া রাবেয়া নিজেকে যে পরিচয় দিয়েছিলেন সেটি ভুয়া, যে কারণে তাকে হত্যাকান্ডের তথ্য উদ্্ঘাটনে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সালমা প্রায় দুই বছর আগে আবুল কালাম নামে এক ব্যক্তিকে স্বামী পরিচয় দিয়ে কুতুবখালীর ওই বাসা ভাড়া নেন। ভাড়া নেওয়ার পর দুই মাসের জন্য তারা অন্যত্র থাকলেও পাঁচ মাস ধরে তারা ওই বাসা ভাড়া নিয়ে ফের বসবাস শুরু করেন। এর কিছুদিন পর ওই বাসায় রাবেয়া ও ফোরকান বসবাস শুরু করেন। ঘটনার দিন বিকাল ৫টার দিকে বাড়ির অন্য ভাড়াটিয়ারা ওই বাসার ভিতর থেকে একজন নারীর চিৎকার শুনতে পান। বাসার দরজায় যাওয়ার পর ভিতরে আটকে থাকা রাবেয়া জানান, কাজের ছেলে ফোরকান তার ভাবিকে খুন করে দরজা লাগিয়ে পালিয়েছে। পরে বাড়িওয়ালা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে তালা ভেঙে রাবেয়াকে থানায় নিয়ে যায় এবং সালমার লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। রাবেয়ার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর জেলায়।

পুলিশ সালমা, রাবেয়া, আবুল কালাম ও ফোরকানের সম্পর্ক এবং হত্যারহস্য উদ্্ঘাটনের খুব কাছাকাছি পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের ডেমরা জোনের এসির দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ইফতেখায়রুল ইসলাম।

এ ঘটনায় নিহত সালমার মামা জাহাঙ্গীর হোসেন যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেছেন। এতে আবুল কালামকে প্রধান এবং ফোরকান ও রাবেয়াকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় আসামি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর