রবিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

পদ্মা খনন করতে চায় ভারত : মেয়র লিটন

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

পদ্মা খনন করতে চায় ভারত : মেয়র লিটন

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, ‘ভারত রাজশাহী থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত পদ্মা নদী ড্রেজিং করতে চায়। কথাবার্তা, সমীক্ষা ও যাচাই-বাছাই চলছে। আগামী মাসেই ভারতীয় প্রতিনিধি দল আসছে। তিনি বলেন, পদ্মার ড্রেজিং হলে রাজশাহীতে একটা আন্তর্জাতিক নদীবন্দরও হতে পারে। শিল্পায়ন তখন খুব সহজ হবে।’

বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। মেয়র খায়রুজ্জামান বলেন, ‘শিল্প-কারখানা করতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জায়গা দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের জায়গা আছে। ওরা আমাদের এখানে আসুক। আমরা জায়গা দেব। ভারতে উৎপাদন খরচ বেশি মনে হলে তারা আমাদের এখানে বিনিয়োগ করুক। আমরা উৎপাদন করে দেব। এই চেষ্টাটা আমাদের আছে। এটা সম্ভব। কারণ, ভারত থেকে আমাদের দূরত্ব বেশি না। আর নদীপথে যোগাযোগও সহজ।’ তিনি বলেন, পিছিয়ে পড়া রাজশাহীকে এগিয়ে নিতে শিল্পায়নের বিকল্প নেই। তাই মনোযোগ এখন শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থানে।        তিনি বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে রাজশাহী অনেক পিছিয়ে গেছে। এখান থেকে বন্দরের দূরত্ব অনেক বেশি। যে কোনো কাঁচামাল আনা বা পণ্য পাঠানো ব্যয়বহুল। এ ছাড়াও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে এখানে শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠেনি। কারণ রাজশাহীকে ঢাকার মতো করেই দেখা হয়েছে। আলাদা করে প্রণোদনা দেওয়া হয়নি। ব্যাংকের সুদের হারটিও একই। এসব কারণে শিল্পায়ন হয়নি, কর্মসংস্থান           হয়নি। এখন আমার মনোযোগ এসব জায়গায়।’ মেয়র বলেন, ‘রাজশাহীতে শিল্পায়নের জন্য বড় সুযোগ হচ্ছে ভারত থেকে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি। কারণ, রাজশাহীর সঙ্গে নৌ-পথে যোগাযোগ অত্যন্ত সহজ। আমরা পদ্মা ড্রেজিং করে খুব অল্প খরচে কাঁচামাল হিসেবে লোহা বা অন্যান্য সামগ্রী আনতে পারি। রেলপথ দিয়েও আনতে পারি। এখানে আমরা পণ্য তৈরি করে একইভাবে আবার ভারতে রপ্তানি করতে পারি। এতে রাজশাহীতে অর্থনৈতিক প্রবাহ সৃষ্টি হবে। আমি এখানেই আপাতত বেশি জোর দিচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ভারি শিল্পের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম এগিয়ে আছে। এরপর হালকা বা মাঝারি শিল্পে এগিয়ে ঢাকা এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকা। আমাদের রাজশাহীতে এগুলোর কোনোটাই হয়নি। সরকারিভাবে যে কয়েকটি কারখানা ছিল, হয় বন্ধ, না হয় ধুঁকে ধুঁকে চলছে। এগুলোকে আমি চলা বলি না। কৃষিনির্ভর অর্থনীতির কারণে এখানে পুঁজিও তৈরি হয়নি। উর্বর জমির কারণে আমরা জমিতেই সময় দিয়েছি। এটা আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ। সেই জায়গা থেকে এখন শিল্পায়নের কথাই ভাবতে হচ্ছে।’

মেয়র লিটন বলেন, ‘রাজশাহীতে অর্থনৈতিক প্রবাহ তৈরিতে কার্যকরী ভূমিকা কেউ নেননি। চেম্বার অব কমার্সকে দেখেছি, যারা সভাপতিত্ব করতেন বা দায়িত্বে থাকতেন তারা দায়সারাভাবেই মেয়াদটা পার করতেন। মনে হতো, সরকারি উন্নয়নমূলক কাজের ঠিকাদারি নেওয়ার জন্যই তারা আসলে চেষ্টা করতেন। কেউ কেউ সরকারের নেক নজরে পড়ে প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী হয়েছেন, রাজশাহীর জন্য কিছুই করেননি। তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলে রাজশাহী এতটা পিছিয়ে পড়ত না।’ রাজশাহীতে শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার ব্যাপক সম্ভাবনা আছে উল্লেখ করে মেয়র লিটন বলেন, ‘রংপুর, নীলফামারীতে গার্মেন্ট কারখানা গড়ে উঠছে। রাজশাহী বা নাটোর, নওগাঁ কিংবা চাঁপাইনবাবগঞ্জে কেন হবে না? রাজশাহী বিমানবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে ছয় মাস বা এক বছর সময় লাগবে। বিমানবন্দরকে আধুনিক করতে চাই। আমার জানা মতে, বিমানবন্দরের রানওয়ে ৬ হাজার ফুট লম্বা করলে এখানে বড় যাত্রীবাহী বিমান ও পণ্যবহনকারী কার্গো বিমান ওঠানামা করতে পারবে। এটি করতে আমার সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে। এটি হলে রাজশাহীতে শিল্প-কারখানা যেমন গড়ে উঠবে তেমনি রাজশাহীর টাটকা সবজি দেশের বাইরে পাঠানো যাবে।’ মেয়র বলেন, ‘এখন সময় এসেছে রাজশাহীর মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর। শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ এখনো কর্মহীন হয়ে আছে। তাদের চাকরির পেছনে না ছুটে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার এলএনজি গ্যাস আমদানি করছে। এই গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে সারা দেশে পৌঁছাবে এবং এর মাধ্যমে রাজশাহীতে শিল্পায়নের ব্যাপক সম্ভাবনা আছে।’

 

সর্বশেষ খবর