বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

এবার ‘মূল হোতা’ খুঁজছে প্রশাসন

পাহাড়ে ফের স্থাপনা উচ্ছেদের উদ্যোগ

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

এবার ‘মূল হোতা’ খুঁজছে প্রশাসন

চট্টগ্রামের ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের আগে নানা তোড়জোড় শুরু হয়। এবারও পাহাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে হার্ডলাইন নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এইসঙ্গে পাহাড় দখলের মূল হোতাদেরও খোঁজা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। এ লক্ষ্যে ৩ মার্চ নগরের সদর, কাট্টলি, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, আগ্রাবাদ ও পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ‘পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসরতদের হালনাগাদ তালিকা’ শীর্ষক একটি চিঠি দেওয়া হয়। ১৫ দিনের মধ্যে এ তালিকা জেলা প্রশাসন বরাবর জমা দিতে বলা হয়। চিঠিতে নির্দিষ্ট ছকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের নাম ও মালিকানা, অবৈধ বসবাসকারীর নাম, পরিবারের সদস্যসংখ্যা, অবৈধ স্থাপনার বিবরণ এবং অবৈধভাবে ভাড়া প্রদানকারীর নাম ও ঠিকানা’ দিতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় নিয়ে হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহের জন্য পাঁচ সহকারী কমিশনারকে বলা হয়েছে। এবার সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করা হবে। বিশেষ করে অবৈধভাবে স্থাপনা তৈরি করে কারা ভাড়া দিচ্ছে, কারা এখানে বসবাস করছে এসব তথ্য দিতে বলা হয়েছে। তথ্য সংগ্রহ করা হলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’ আগ্রাবাদ সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন আখতার বলেন, ‘চিঠি পাওয়ার পর আমার তিনটি মৌজায় কাজ শুরু হয়েছে।

 নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তথ্য প্রেরণ করা হবে।’ অভিযোগ আছে, পাহাড়ের আশপাশের স্থানীয় প্রভাবশালীরা পাহাড় কিংবা পাহাড়ের পাদদেশ কেটে, সমতল করে কাঁচা-পাকা ঘর নির্মাণ করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। এ নিয়ে প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা থাকে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হলেও কিছুদিন পর তারা আবার ফিরে আসে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে। ফলে পাহাড়ধসে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হলেও অধরাই থেকে যান প্রভাবশালীরা। জেলা প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রাম মহানগর ও আশপাশে সরকারি-বেসরকারি প্রায় ৫০০ পাহাড় আছে। এর মধ্যে ২৮টি অতিঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ৬৮৪টি পরিবার বাস করছে। এর মধ্যে রেলওয়ের মালিকানাধীন আছে সিআরবির পাদদেশ, টাইগার পাস-লালখান বাজার রোডসংলগ্ন পাহাড়, টাইগার পাস মোড়ের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের পাহাড়, রেলওয়ে এমপ্লয়িজ গার্লস স্কুলসংলগ্ন পাহাড় ও আকবর শাহ আবাসিক এলাকাসংলগ্ন পাহাড়।

সড়ক ও জনপথ, রেলওয়ে, গণপূর্ত ও ওয়াসার মালিকানাধীন আছে মতিঝর্ণা ও বাটালি হিলসংলগ্ন পাহাড়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আছে পরিবেশ অধিদফতরসংলগ্ন পাহাড় ও লেক সিটি আবাসিক এলাকার পাহাড়। বন বিভাগের বন গবেষণাগার ও বন গবেষণা ইনস্টিটিউট-সংলগ্ন পাহাড়। ইস্পাহানি গ্রুপের ইস্পাহানি পাহাড়। জেলা প্রশাসনের ডিসি হিলের চেরাগি পাহাড় মোড়সংলগ্ন পাহাড়, এ কে খান কোম্পানির এ কে খান কোম্পানি পাহাড়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড়, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কৈবল্যধামস্থ বিশ্ব কলোনির পাহাড়, ভিপি লিজভুক্ত লালখান বাজার, চাঁদমারি রোডসংলগ্ন জামেয়াতুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসাসংলগ্ন পাহাড়, সরকারি (এপি সম্পত্তি) নাসিরাবাদ শিল্প এলাকাসংলগ্ন পাহাড়। ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড়গুলোর মধ্যে আছে মোজফফরনগর পাহাড়, প্রবর্তক পাহাড়, গোল পাহাড়, জয় পাহাড়, চট্টেশ্বরী হিল, ফয়’স লেক আবাসিক এলাকা পাহাড়, জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটিসংলগ্ন পাহাড়, গরিবুল্লাহ শাহ মাজারসংলগ্ন বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি পাহাড়, মিয়ার পাহাড়, ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট একাডেমির উত্তর পাশে মীর মোহাম্মদ হাসানের পাহাড়, ইস্পাহানি পাহাড়সংলগ্ন দক্ষিণ পাশের হারুন খানের পাহাড়ের পশ্চিমাংশ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর