মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঐতিহাসিক স্থাপনা ভেঙে হচ্ছে হাসপাতাল

সিলেটে আন্দোলনের ডাক

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

ঐতিহাসিক স্থাপনা ভেঙে হচ্ছে হাসপাতাল

খোলা মাঠের চারপাশে দাঁড়িয়ে আছে আসাম প্যাটার্নের একতলা ভবন। অনন্য সুন্দর নির্মাণশৈলীর এ ভবনগুলো দূর থেকে দেখতে মনে হয় জমিদার বাড়ি। তবে সিলেট নগরবাসীর কাছে এর পরিচিতি ‘আবু সিনা ছাত্রাবাস’ হিসেবেই। ওসমানী মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এ ভবনগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতি। প্রায় ২শ বছরের পুরনো এ ভবনগুলো ভেঙে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ২৫০ শয্যার নতুন হাসপাতাল নির্মাণের। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। ঐতিহাসিক এ স্থাপনাকে প্রত্নসম্পদ দাবি করে তা ধ্বংসের পরিবর্তে সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন তারা। এ দাবিতে তারা আজ থেকে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। সিলেট নগরীর চৌহাট্টায় পুরনো চারটি ভবনে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছিল ওসমানী মেডিকেল কলেজের ‘আবু সিনা ছাত্রাবাস’-এর কার্যক্রম। ঐতিহাসিক এ ভবনগুলো কখন নির্মাণ করা হয়েছিল তার সঠিক ইতিহাস পাওয়া না গেলেও অনেকেই মনে করেন স্থাপনাগুলো অন্তত ২শ বছরের পুরনো। ১৮৬৯ ও ১৮৯৭ সালে প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে সিলেটের প্রায় সবকটি পাকা স্থাপনা ভেঙে পড়লেও অক্ষত ছিল বর্তমানে ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহৃত এ ভবনগুলো। তাই সিলেটের সবচেয়ে পুরনো ভবন হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে ছাত্রাবাসের ভবনগুলো। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এ ভবনেও ধ্বংসযজ্ঞ চালায় পাক বাহিনী। পাশের সদর হাসপাতালে দায়িত্বরত অবস্থায় পাক বাহিনীর গুলিতে নিহত হন ডা. শামসুদ্দিন আহমদসহ কয়েকজন। সিলেটের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাতা নিরঞ্জন দে জানান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভবনটি বর্মি ও ব্রিটিশ বাহিনীর ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। তবে এ ভবনগুলো এক সময় জমিদার বাড়ির ঘর ছিল- এমন জনশ্রুতিও আছে সিলেটে। এদিকে, গত বছরের জানুয়ারিতে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সিলেট জেলা হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় ২শ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক ভবন ভেঙে ওই হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ায় ক্ষোভ দেখা দেয় সচেতন মহলে। নিয়মানুযায়ী কোনো স্থাপনা একশ বছরের পুরনো হলে সেটিকে প্রত্নসম্পদ হিসেবেই বিবেচিত হয়ে থাকে। এ রকম কোনো স্থাপনা ভাঙতে হলে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অনুমতির প্রয়োজন হলেও গণপূর্ত বিভাগ হাসপাতালের নির্মাণকাজ শুরুর আগে তা করেনি। গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কুতুব আল হোসাইনের দাবি, আবু সিনা ছাত্রাবাসের ভবনগুলো প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তালিকাভুক্ত নয়। তাই তারা এগুলো ভেঙে হাসপাতাল নির্মাণকাজ করছেন।

 তবে গণপূর্ত বিভাগের এমন দাবি মানতে নারাজ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক আতাউর রহমান। তিনি বলেন, তালিকা বহির্ভূত স্থাপনাও প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ হতে পারে। তালিকায় থাকুক বা না থাকুক ১০০ বছরের পুরনো কোনো স্থাপনা ভাঙতে হলে প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগকে অবশ্যই অবগত করতে হয়। কিন্তু ওই স্থাপনা ভাঙার কাজ শুরুর আগে স্বাস্থ্য অধিদফতর বা গণপূর্ত বিভাগ এ রকম কোনো অনুমতি নেয়নি। এদিকে ঐতিহাসিক এ স্থাপনাগুলোকে প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ ঘোষণা করে সেখানে ‘মিউজিয়াম’ নির্মাণের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন সিলেটের প্রত্নতত্ত্ব ও পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপার উদ্যোগে আজ দুপুর ১২টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন ও আগামীকাল বিকাল ৪টায় ‘আবু সিনা ছাত্রাবাস’-এর সামনে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে ‘সেভ দ্য হেরিটেজ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ নামক সংগঠন।

 

সর্বশেষ খবর