বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

অস্তিত্ব সংকটে মহানগর বিএনপি

চট্টগ্রামে ১১ অঙ্গসংগঠন স্থবির, নেই কোনো কর্মসূচি

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

অস্তিত্ব সংকটে মহানগর বিএনপি

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি যেমন ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না রাজনীতির মাঠে, তেমনি দলটির ১১ অঙ্গসংগঠনও স্থবির হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে মহানগর যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল নামমাত্র সংগঠনে পরিণত হয়েছে। অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে মহিলা দল, শ্রমিক দল, মৎস্যজীবী দল, জাসাসসহ অন্য অঙ্গসংগঠনগুলোও। দীর্ঘদিন জোরালো কোনো কর্মসূচি নেই এই সংগঠনগুলোর। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর একেবারেই ঝিমিয়ে পড়েছে এসব অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন। অধিকাংশ নেতা-কর্মী কারাগারে বা কারাগারের বাইরে থাকলেও একাধিক হুলিয়া নিয়ে পলায়নপর অবস্থায় রয়েছেন। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির এই অঙ্গসংগঠনগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করছেন নেতাদের কেউ কেউ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ বছরেরও আগে মাত্র ১১ জন দিয়ে গঠিত ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ নগর কমিটি করার কথা ছিল এক মাসের মধ্যে। কিন্তু তা এখনো হয়নি। প্রায় দেড় বছর আগে সাত সদস্য নিয়ে গঠিত স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কথা ছিল দুই মাসের মধ্যে, কিন্তু সেটাও আর হয়নি। সংগঠনটির কমিটিতে থাকা সাতজনের মধ্যে চারজনই এখন বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। আবার নগর যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও কার্যকর কোনো ভূমিকা নেই মাঠের     রাজনীতিতে। কমিটি গঠনের এক মাসের মধ্যে নগরীর ১৫ থানা ও ৪১ ওয়ার্ডে যুবদলের কমিটি গঠনের কথা থাকলেও তা আর হয়নি। সব মিলে মূল দলের মতো বিএনপির অঙ্গসংগঠনগুলোর অবস্থা বেশ সংকটাপন্ন। অঙ্গসংগঠনগুলোর অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ার কারণে দলের কোনো কর্মসূচি আর আগের মতো জমে উঠছে না। একসময় নগর বিএনপির যে কোনো কর্মসূচি সফল করতে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও এখন কোনো কর্মসূচিতে তাদের তেমন উপস্থিতি থাকে না। জানা যায়, ২০১৩ সালের ২২ জুলাই মাত্র ১১ জন নিয়ে মহানগর ছাত্রদলের অসম্পূর্ণ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং চারজন সহসভাপতি, চারজন যুগ্ম সম্পাদক এবং একজনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। এদের মধ্যে সভাপতি গাজী সিরাজ পরে মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হয়ে মূল দলে চলে যান। সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত  হোসেন বুলুকে করা হয় মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক। চার সহসভাপতির মধ্যে মঈন উদ্দিন শহীদ বর্তমানে নগর বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক, ফজলুল হক সুমন নগর যুবদলের সহসভাপতি ও জিয়াউর রহমান জিয়া নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রয়েছেন। চার যুগ্ম সম্পাদকের মধ্যে জমির উদ্দিন নাহিদ বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক, আলী মর্তুজা স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক ও মোশাররফ হোসেন যুবদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম রাশেদ বর্তমানে নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি। আর আরেক যুগ্ম সম্পাদক জালাল উদ্দিন সোহেল মারা গেছেন। ছাত্রদলের ১১ জনের কমিটির মধ্যে এখন রয়েছেন শুধু সহসভাপতি জসিম উদ্দিন চৌধুরী। অন্যদিকে আরেক সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাত সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা হয় ২০১৮ সালের ২৬ জুলাই।

কেন্দ্র ঘোষিত এই কমিটিতে নগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম রাশেদ খানকে সভাপতি এবং নগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। তোফাজ্জেল হোসেনকে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি, আসাদুজ্জামান দিদারকে সহসভাপতি, নগর ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক আলী মর্তুজা খানকে সহসভাপতি, নগর ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক জমির উদ্দিন নাহিদকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং নগর ছাত্রদলের সহসভাপতি জিয়াউর রহমান জিয়াকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। তখন নবগঠিত কমিটিকে পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয় কেন্দ্র থেকে। কিন্তু কমিটি ঘোষণার এক মাস পার না হতেই গ্রেফতার হন সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু। বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্ত থাকলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের বিষয়ে হাত দেওয়া হচ্ছে না। একই সঙ্গে মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পদেও রয়েছেন বেলায়েত হোসেন বুলু।

জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে আমাদের। মামলায় জর্জরিত অধিকাংশ নেতা। আবার অনেকে এখনো কারাগারেই রয়েছেন বন্দী। এ অবস্থায় অঙ্গসংগঠনগুলোর কার্যকর ভূমিকা পালন কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

সর্বশেষ খবর