শিরোনাম
শুক্রবার, ২২ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
তদন্ত কমিটি গঠন

মাদ্রাসার ১১ বিঘা জমি নিজ নামে রেজিস্ট্রি অধ্যক্ষের

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

মাদ্রাসার জমি থাকবে মাদ্রাসার নামে। কিন্তু হঠাৎ করেই এক নোটিসে সব তোলপাড়। মাদ্রাসার ১১ বিঘা জমির দলিল হয়েছে অধ্যক্ষের নামে। সেটি খারিজ করতে ভূমি অফিস থেকে সোমবার পাঠানো হয়েছে নোটিস। ঘটনাটি ঘটেছে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার সাঁকোয়া বাকশৈল কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুল কাদেরের নামে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সাঁকোয়া বাকশৈল কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুল কাদের কৌশলে তার নামে এই বিপুল পরিমাণ জমি রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন। এনিয়ে জেলা প্রশাসককে লিখিত অভিযোগ করেছেন সাঁকোয়া গ্রামের মোবারক আলী, বরিঠা গ্রামের শরিফুল ইসলাম, ওমর ফারুক, ইসমাইল হোসেন ও কিবরিয়া। মোহনপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মির্জা ইমাম উদ্দিন বলেন, ‘দলিলের সার্টিফাইট (সত্যায়িত) কপি দিয়ে তা খারিজের আবেদন করেছিলেন অধ্যক্ষ আবদুল কাদের।

তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জমির ওয়ারিশদের কাছে খারিজ নোটিস পাঠানো হয়।’

তবে অধ্যক্ষ আবদুল কাদের বলেন, ‘আমাকে ফাঁসানোর জন্য কেউ আমার নামে ভুয়া দলিল ও খারিজ নোটিস তৈরি করেছে। এর সঙ্গে আমি জড়িত নই।’ তাহলে খারিজের আবেদনটি কে করল জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে অস্বীকার করেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ থেকে জানা যায়, মোহনপুর উপজেলার সাঁকোয়া, বাকশৈল, হরিদাগাছি মৌজায় মাদ্রাসায় জমি দান করেন কেরামতুল্লাহ, সুন্দর বিবি, লোকমান ম-ল, আনিস ম ল, কছিম উদ্দিন, তাহেরা খাতুন, আনিস মল্লিক ও আমির উদ্দিন। তাদের সাঁকোয়া বাকশৈল কামিল মাদ্রাসার নামে দান করা জমির দলিল নম্বর- ৩২৬৮৭, তারিখ ১৯৭৫ সালের ২৪ জুন। এরপর থেকে জমিগুলো মাদ্রাসা ভোগ দখল করছে।

সাঁকোয়া মৌজার খতিয়ান নম্বর-৩৭৭, দাগ নম্বর- ৯৩, ১১৬, ১৩০, ৭৮৯, ১৫২৯, ১৬৫৫, ১৬৭৩, পরিমাণ ০.৮৪০০ একর, বাকশৈল মৌজার খতিয়ান-৫৪৫, ৫৪০, ৫৪৩, দাগ নম্বর- ২৫৮, ৪৯০, ১৭৬৩, ২৩৬, ২৮৯, ১৬৪৮, ৩২৫৮, ৪৬১, ৪৭৭, ২৯৩৪, ২৯৩৪, ২৯৩৮, ১৬৫৪, পরিমাণ ২ দশমিক ২৯০০ একর, হরিদাগাছি মৌজার দাগ নম্বর-৭০৪, পরিমাণ ০.৪৭০০ একর। ১৯৯৫ সালে এসব জমির একটি দলিল (দলিল নম্বর- ৬৭২-৯-১৮৫-১৯০) তৈরি করেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুল কাদের। তবে এতদিন খারিজের আবেদন করেননি।

জমির ওয়ারিশ ওমর ফারুক জানান, ৮ মার্চ মোহনপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস থেকে খারিজ নোটিস (খারিজ কেস নম্বর- ৪-৯৩৩/৯১/১৮-১৯ প্রঃ ৯৩৫/৯-১/১৭-১৮) পাঠানো হয়। জমি দাতাদের প্রতিপক্ষ করে অধ্যক্ষ আবদুল কাদের জমি খারিজের আবেদন করেন। জমির ওয়ারিশদের কাছে ভূমি অফিস থেকে নোটিস জারি হলে তারা জানতে পারেন দলিল তৈরি করে মাদ্রাসায় দান করা জমি নিজের নামে করে নিচ্ছেন অধ্যক্ষ। বিষয়টি তারা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে জানান।

মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কেশরহাট পৌরসভার মেয়র শহিদুজ্জামান শহিদ বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরে জরুরি বৈঠক করা হয়। বিষয়টি জানতে চাইলে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বলেছেন, ভুল করে সভাপতি বা অধ্যক্ষের পরিবর্তে আবদুল কাদের হয়েছে। এ কারণে খারিজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’

জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদের বলেন, বিষয়টি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (শিক্ষা) আলমগীর কবিরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর