রবিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে উত্তাল বরিশাল

দুর্ভোগে যাত্রীরা তদন্ত কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

বরিশালে বাসচাপায় সাতজন নিহতের ঘটনায় অভিযুক্ত চালককে আটকের প্রতিবাদে অভ্যন্তরীণ রুটে তিন ঘণ্টা বাস চালানো বন্ধ রাখেন পরিবহনশ্রমিকরা। পক্ষান্তরে বি এম কলেজ শিক্ষার্থী শিলা হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তিসহ নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে রাখেন। পরে মেয়রের আশ্বাসে তারা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন। অন্যদিকে নিহতদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে শোকমিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আর দুর্ঘটনার তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। জানা যায়, বরিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় সাতজন নিহতের ঘটনায় অভিযুক্ত বাসের চালক আবদুল জলিলকে আটকের প্রতিবাদে নগরের নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চালানো অঘোষিতভাবে বন্ধ রাখেন পরিবহনশ্রমিকরা। গতকাল সকাল ১০টার দিকে ওই টার্মিনাল থেকে অভ্যন্তরীণ রুটের বাস চলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন যাত্রীরা। এদিকে নিহত সাতজনের মধ্যে বরিশাল বি এম কলেজের গণিত বিভাগের স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষের ছাত্রী শিলা হালদার হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয় বাস টার্মিনালে। উত্তেজনা প্রশমনে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা চালান। তিনি শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার অনুরোধ করেন।

অন্যদিকে বাসচালককে আটকের প্রতিবাদে গতকাল সকাল ১০টার দিকে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে আকস্মিক অভ্যন্তরীণ রুটের সব বাস চালানো বন্ধ করে দেন পরিবহনশ্রমিকরা। এতে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। শ্রমিক ইউনিয়ন আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ধর্মঘট আহ্বান করেনি দাবি করলেও তারা সড়ক-মহাসড়ক থেকে সকল প্রকার থ্রি হুইলার বন্ধের দাবি জানান। এদিকে শ্রমিকরা অঘোষিতভাবে বাস বন্ধ রাখার মধ্যেই বেলা ১১টার দিকে বি এম কলেজ ছাত্রী শিলা নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ও ঘাতক বাসচালকের ফাঁসি এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের উদ্দেশে রওনা দেন বি এম কলেজের শিক্ষার্থীরা। পথে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বেশ কিছুক্ষণ ধাক্কাধাক্কির পর শিক্ষার্থীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বাস টার্মিনালে গিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। তারা শিলার হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তির পাশাপাশি নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্লোগান দেন।

নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে পরিবহনশ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি অবস্থানের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। তিনি শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক উল্লেখ করে তাদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান এবং আগামী দুই দিনের মধ্যে এ বিষয়ে যৌক্তিক সমাধান দেওয়ার আশ্বাস দেন। তার আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা প্রায় আধাঘণ্টা পর সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে ক্যাম্পাসে ফিরে যান বলে জানান সাদিক আবদুল্লাহ।

শিক্ষার্থীরা চলে যাওয়ার পর পরিস্থিতি শান্ত হলে দুপুর পৌনে ১টার দিকে নথুল্লাবাদ থেকে অভ্যন্তরীণ রুটের বাস চলা স্বাভাবিক হয়।

অন্যদিকে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেখানে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নগরের বিমানবন্দর থানার ওসি আবদুর রহমান মুকুল।

এদিকে, বাসের চাপায় নিহত রিকশাশ্রমিক মো. খোকনসহ ক্ষতিগ্রস্ত সাতজনের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া, সড়কে বেপরোয়া যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার দাবিতে শোকমিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বরিশাল মহানগর রিকশা-ভ্যান চালক-শ্রমিক ইউনিয়ন ও জেলা সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের উদ্যোগে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় সদর রোড অশ্বিনী কুমার হলের সামনে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মহানগর রিকশা-ভ্যান চালক-শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন দিদারের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন জেলা বাসদের সদস্যসচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী, শহিদুল ইসলাম, বাবুল তালুকদার, মহসিন মীর প্রমুখ। এর আগে একই দাবিতে নগরে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।

এদিকে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক এবং মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রতিনিধি, বিআরটিএর সহকারী পরিচালক, বিসিসি প্রতিনিধি ও ফায়ার সার্ভিস প্রতিনিধির সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে নগদ ২০ হাজার ও আহতদের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তা দেন জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান।

উল্লেখ্য, শুক্রবার সকালে বরিশাল-বানারীপাড়া সড়কের গড়িয়ারপাড় তেঁতুলতলায় বাস ও মাহেন্দ্র আলফার মুখোমুখি সংঘর্ষে কলেজ শিক্ষার্থী, মাহেন্দ্রচালক, মা ও ছেলে শিশুসহ সাতজন নিহত হন। ওইদিন রাতেই নগরের বিমানবন্দর থানা পুলিশ সদর উপজেলার চাঁদপুরা ইউনিয়নের আরজিকালিকাপুর গ্রামের বাড়ি থেকে ঘাতক বাস দুর্জয় পরিবহনের চালক আবদুল জলিলকে গ্রেফতার করে।

সর্বশেষ খবর